কক্সবাজারে দুই মাস মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ রাখতে চায় র‌্যাব

মাদকের অর্থ লেনদেন হচ্ছে সন্দেহ প্রকাশ করে কক্সবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং আগামী দুই মাস বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2018, 05:20 PM
Updated : 22 July 2018, 05:20 PM

রোববার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে মাদকবিরোধী একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে এই প্রস্তাব দেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

র‌্যাব প্রধান বলেন, “কক্সবাজারে মাত্র ২৩ লাখ লোক বসবাস করে। সেখানে শত শত কোটি টাকার ট্রানজেকশন কেন হয়? সেখানে কোনো ইন্ড্রাস্ট্রি নাই, তেমন বড় কোন ব্যবসা নাই। তাহলে কেন সেখানে হান্ড্রেস অব ক্রোরস টাকা লেনদেন হচ্ছে।”

বাংলাদেশে এখন ইয়াবার মতো মাদক পাচারের রুট হিসেবে কক্সবাজার ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ইয়াবা কেনাবেচার অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে বলে বেনজীরের সন্দেহ।

“আমরা পরীক্ষামূলকভাবে অনুরোধ করব স্যার, কক্সবাজারমুখী সব ট্রানজেকশন দুই মাসের জন্য বন্ধ রাখার। আমরা দেখতে চাই, এর প্রতিক্রিয়া কী হয়?”

মাদকের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে র‌্যাব প্রধান বলেন, “সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও কেউ কেউ বলেন মাদকাসক্তের পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ। এখানে যদি ৬০ লক্ষ ইয়াবা সেবন করেন, তাহলে এই এনুয়াল ইকোনমির পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যদি হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা যোগ করা হয়, তাহলে তা ১ লক্ষ কোটি টাকার ইকোনমি।”

মাদকবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সুতরাং আমরা এটা প্রতিরোধে যে কাজ করছি, সেটা কিন্তু মৌচাকে ঢিল না, ভিমরুলে ঢিল। ঢিল ছুড়েছি ভিমরুলের চাকে। এদের পিষে মারার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।”

এবছরের প্রথম তিন মাসে উদ্ধার হয় ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬১১টি ইয়াবা ট্যাবলেট (ফাইল ছবি)

অনুষ্ঠানে বেনজীর গত মে মাস থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “এখানে ১৭৯১টি অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। যেখানে ৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে এই পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও কুখ্যাত ৪৭ জন মাদক ব্যবসায়ী গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে।”

এই ৮০ দিনে ১০২ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার এবং ১০ হাজার লোককে গ্রেপ্তারের কথা জানান তিনি, যার মধ্যে ৫ হাজার ৮৭৭ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মাদক নির্মূল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি  আমাদের দেশ থেকে নির্মূল করতেই হবে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। যেদিন মাদক নিয়ন্ত্রণ হবে, সেদিন এই যুদ্ধ থামবে।”

মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে অস্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এভাবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ সমালোচনাও করছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কোনো মানুষ মারি না। তোমাদের দেশে কী হয়েছে, তারও খোঁজ নাও। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে কী হয়েছে, সেটারও খোঁজ নাও।

“তোমরা যেহেতু প্রশ্ন করছ, তাই তোমরা জান, যেখানে অবৈধ ব্যবসা সেখানেই অবৈধ অস্ত্র। এইগুলো প্রটেকশন দেওয়ার জন্য অস্ত্র আসতেই হবে। যারা এই ব্যবসা করে, তারা অবৈধ অস্ত্রের আশ্রয় নিয়েই থাকে।

“ওই সমস্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের যখন ধরতে গিয়েছি, তখন তারা চ্যালেঞ্জ করেছে, সেখানে পুলিশ আহত হয়েছে এবং তাদের পরিণতি কী হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করলে কোনো দেশের নিরাপত্তা বাহিনীই বসে থাকে না।”

অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।