নামের ভুলে রাকিব ‘ক্রসফায়ারে’, দাবি পরিবারের

ঢাকার ওয়ারিতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত রাকিব হাওলাদার নামের পুলিশের ‘ভুলের শিকার’ বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2018, 01:14 PM
Updated : 22 July 2018, 01:14 PM

রাকিবের মা রীতা আক্তার ও বাবা মহসীন হাওলাদার রোববার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, তাদের কিশোর ছেলেকে ওয়ারি থানার ওসির নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

রাকিবের বয়স ১৫ বছর বলে তার বাবা-মা দাবি করলেও পুলিশের দাবি, তার বয়স ২২ বছর।

গত ৬ এপ্রিল ওয়ারিতে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাকিবের মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রীতা আক্তার বলেন, ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাকিব তার জন্য পান আনতে গেলে তাকে ‘ধরে নিয়েছিল’ ওয়ারি থানার এসআই জ্যোতি।

তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি থানায় গিয়ে ওসির কক্ষ থেকে তার সন্তানের আর্তচিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন। ওসির কক্ষে ঢুকে দেখেছিলেন, তার ছেলের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা,  হাতে হাতকড়া পরানো। ওই সময় তাকে জোর করে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এর আর খোঁজ পাচ্ছিলেন না ছেলের। ৬ এপ্রিল তাকে জানানো হয় যে রাকিব ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন।

“খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পাই, আমার ছেলের ডান হাত ভাঙ্গা, মাথা কাঁটা, পেটে আঘাতের চিহ্ন ও পা দুটিও ভাঙ্গা,” বলেন রীতা।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা রাকিব জয়কালী মন্দিরের কাছে একটি চায়ের দোকান চালাত বলে জানান রীতা।

রীতার পরিবারের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাকিব জয়কালী মন্দিরের কাছে ‘ছিনতাই করতে গিয়ে’ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা যান।

ওয়ারি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “রাকিবের বয়স ছিল ২২ বছর। ওই চায়ের দোকান চালাত রীতা। রাকিব বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল।”

গত বছরের ৮ অক্টোবর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া শাখার কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহা ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মারা যান।

ওই হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ রাকিবই ছিলেন দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, “এ ঘটনায় রাকিবের দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।”

রীতা বলেন, “তালহা হত্যাকাণ্ডে গোপীবাগের ‘মেগনেট রাকিব’ জড়িত। আমার ছেলের নাম রাকিব হওয়ায় ভুল করে এ ঘটনা ঘটেছে। আর মেগনেট রাকিব বর্তমানে ভারতে।”

ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে রীতা তার ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটির  সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন তিনি।

ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে ওয়ারী থানার ওসিসহ চারজনকে আসামি করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন রীতা। তাতে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।