আধুনিক দাসের জীবনে ছয় লাখ বাংলাদেশি: স্লেভারি ইনডেক্স

বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ মানুষ আজও দাসের মতো জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন বলে উঠে এসেছে এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2018, 09:01 AM
Updated : 20 July 2018, 10:32 AM

রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া কারণে অথবা কোনো না কোনোভাবে এই মানুষগুলো নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবন যাপনে, অথবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে কাটাচ্ছেন কৃতদাসীর জীবন।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন তাদের এই দুর্দশাকে বর্ণনা করেছে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে। বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এই দাসত্বের শিকার। 

বৃহস্পতিবার ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স-২০১৮ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩.৬৭ জন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ‘আধুনিক দাসত্ব’ শিকার হচ্ছেন। ষোল কোটি মানুষের এই দেশে এ ধরনের দুর্দশায় পড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ ৯২ হাজার।

জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৯২তম।    

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে যারা ‘আধুনিক দাসের’ জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের অধিকাংশের বসবাস এশিয়ায়। আর মোট সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে বেশি আধুনিক দাসের বসবাস চীন, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ায়; এই সংখ্যা বিশ্বে আধুনিক দাসের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ।

প্রতি হাজারে এ ধরনের দুর্দশায় শিকার মানুষের হার বিবেচনা করলে এবারের সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। সেখানে প্রতি হাজারে ১০৪. ৬ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার। 

ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের গবেষকরা উত্তর কোরিয়ার ৫০ জন নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যারা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে রাষ্ট্রের নির্দেশে তারা বিনা মজুরিতে কৃষি খামার, নির্মাণ অথবা অবকাঠামো খাতে শ্রম দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ইয়ন-মি পার্ক এরকমই একজন কিশোরী, যিনি উত্তর কোরিয়া থেকে পাচারের শিকার হয়ে চীনে যেতে বাধ্য হন। সেখানে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বিয়ের কনে হিসেবে। 

সম্প্রতি জাতিসংঘে এক অনুষ্ঠানে  ইয়ন-মি পার্ক বলেন, “হয়ত ভুল জায়গায় আমাদের জন্ম হয়েছে, এ কারণেই এই শাস্তি।”

এই তালিকার শীর্ষ দশে উত্তর কোরিয়ার পরে ধারাবাহিকভাবে এসেছে ইরিত্রিয়া, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আফগানিস্তান, মৌরিতানিয়া, সাউথ সুদান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও ইরান।

আধুনিক দাসত্বের এই প্রচ্ছন্ন অপরাধ থেকে মুক্ত নয় উন্নত বিশ্বও। যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ, যুক্তরাজ্যের ১ লাখ ৩৬ হাজার,     জার্মানির ১ লাখ ৬৭ হাজার, ফ্রান্সের ১ লাখ ২৯ হাজার মানুষ দাসের মত জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে বলে উঠে এসেছে এবারের প্রতিবেদনে।

ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ফরেস্ট বলেন, “আধুনিক দাসত্ব আধুনিক বিশ্বের তৈরি একটি সমস্যা। আধুনিক দেশগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা, তাদেরকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে প্রতি হাজারে ২২.২ জন, পাকিস্তানে হাজারে ১৬.৮ জন, মিয়ানমারে ১১ জন, ভারতে ৬.১ জন, নেপালে ৬ জন এবং শ্রীলঙ্কায় ২.১ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার।  

এই দাসত্বের অবসানে সরকারের পদক্ষেপ ও তাতে সাফল্যের বিবেচনায় সূচকে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে ‘বি’ রেটিং।

এর অর্থ হলো, বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যায় সাড়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে এবং কিছু মানুষকে সহায়তাও দিতে পারছে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এমন কাঠামো যুক্ত করতে পেরেছে, যাতে কাউকে দাসের জীবনে বাধ্য করা হলে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দিতে একটি নীতি কাঠামোও তৈরি করতে পেরেছে।

এই বিচারে বাংলাদেশের স্কোর একশর মধ্যে ৪৪.৪। আর তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা নেদারল্যান্ডসই কেবল ‘এ’ রেটিং পেয়েছে। দেশটির স্কোর ৭৫.২।