এরা হলেন- মিজান শেখ, মেহেরুন্নেছা ঝর্ণা ওরফে আফরিন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া ও ফরিয়া বিনতে মীম।
বুধবার রাতে বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান।
বৃহস্পতিবার মিণ্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামুন হত্যাকাণ্ডে এনিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হল। মামুন নিখোঁজ হওয়ার পরই তার বন্ধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৮ জুলাই মামুন রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন এবং সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার। পরে ১০ জুলাই গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলার এক জঙ্গলে মামুনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, আফরিন বনানীর ২/৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার বান্ধবীর জন্মদিনের দাওয়াত দেয় পূর্বপরিচিত রহমত উল্লাহকে। রহমতের ডাকে সেখানে মামুনও যায়। রহমত উল্লাহ নিজের প্রাইভেটকারে, মামুন যায় তার মটরসাইকেল নিয়ে।
ওই বাসায় যাওয়ার পর গ্রেপ্তারকৃত মিজান শেখসহ চার-পাঁচ যুবক রহমত ও মামুনের উপর চড়াও হয়। ওই দলে দিদার, আতিক ও স্বপন নামে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত তিন সদস্য ছিল বলে তিনি জানান।
বাতেনের ভাষ্য, তারা বলতে থাকে, ‘আফরিন খারাপ মেয়ে, তোরাও খারাপ। আমরা প্রশাসনের লোক।’ মামুন তাদের কাছে জানতে চায়, তারা কোন প্রশাসনের লোক এবং নিজের পুলিশের পরিদর্শক পরিচয় দেয়। তারা মামুনকে কিলঘুষি মারতে থাকে।
পরে তারা মামুন ও রহমত উল্লাহর মুখে টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখে। রাত ১২টার দিকে মামুন মারা যায়। পরদিন সকালে মামুনের মৃতদেহ বস্তায় ভরে রহমত উল্লাহ গাড়িতে করে উলুখোলার জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পোড়ানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই অভিন্ন বর্ণনা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ওই চক্রের টার্গেট ছিল রহমত উল্লাহকে ওই বাসায় নিয়ে আটকে, ছবি তোলে ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া। কিন্তু মামুন যাওয়ায় এবং নিজেকে পুলিশ বলায় তাদের সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যায়।
আফরিন, রহমত উল্লাহ ও মামুন- তিনজনই অপরাধমূলক নাটকে অভিনয় করলেও আফরিনের সঙ্গে মামুনের পরিচয় ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
“চার বছর আগে পরিচয় হওয়া রহমত উল্লাহর কারণেই মামুন ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিল।”
মামুনকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে বাতেন বলেন, “মূলত কিলঘুষিতে মামুন মারা যায়। হয়ত কোনো কিলঘুষি শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে লাগায় তার মৃত্যু হয়।”
চারজনকেই বিকালে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। এরমধ্যে তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, অন্যজনকে জিজ্ঞাসাবাদের তিন দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
মামুন হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ডিবি) শেখ মাহবুবুর রহমান চার আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
তিন আসামি ফারিয়া বিনতে মিম, মিজান ও আফরিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সুরাইয়াকে সাত দিনের রিমান্ডে চাওয়া হয়।
মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তারের খাস কামরায় ফারিয়া, মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলামের খাস কামরায় মিজান এবং মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের খাসকামরায় আফরিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। এরপর তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে।
মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম অন্য আসামি সুরাইয়ার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।