বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্মেলন কক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা: শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, এটা দ্রুত করতে পারব।”
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ও দৈনিক ইত্তেফাক যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সামাজিক অগ্রগতিতে সরকারের বিভিন্ন তৎপরতা তুলে ধরে চুমকি বলেন, “এখন ভিক্ষুকের সংখ্যা আগের তুলনায় কমে গেছে। বাল্যবিয়ে আগে ছিল অগণিত, কিন্তু এখন অনেকটা কমে গেছে। কোথাও কোনো শিশু নির্যাতন নজরে আসলে তার বিচার হচ্ছে। বাল্যবিয়ে রোধ করতে আমরা কিশোর-কিশোরী ক্লাব করে দিয়েছি।
“দুই কোটি নারীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের জন্য ডে-কেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”
শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু করতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে, কেননা তারা দরিদ্র। দরিদ্রতা কমিয়ে আনার মাধ্যমে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
“শ্রম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশে বিত্তবান লোকের সংখ্যা কম নয়, সেই তুলনায় হতদরিদ্র শিশুর সংখ্যা কম। একেকজন বিত্তবান যদি একেকটি শিশুর দায়িত্ব নেয়, তাহলে এসব শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মূচির আওতায়ও আমরা শিশুদের জন্য কাজ করছি।”
“আমাদের দেশে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ব্যয় করা হয় মোট দেশজ আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, কিন্তু পাশ্চাত্যে এ সংখ্যাটা অনেক বেশি। ফ্রান্সে ১৮ শতাংশ ও জাপানে ১৯ শতাংশ। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ব্যয় আরও বাড়াতে হবে।”
বাজেটের পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়ে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, “শিশুদের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে আলাদা বাজেট দেওয়া হচ্ছে। শিশুকে নিরাপদ রাখতে শুধু আইন প্রয়োগ করে নয়, নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে।
“এমডিজিতে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি, এটিকে আমরা টেকসই করতে চাই। ঘরে-বাইরে যেসব শিশু আছে, তাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। মাদকাসক্ত শিশুদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।”
সাংসদ জেবুন্নেসা আফরোজ বলেন, “আমরা যারা শিশুদের গৃহকর্মের জন্য রাখি, তাদের এ শিশুদের নিজের সন্তানের মতো ভালবাসতে হবে। তাদের গৃহকর্মে রাখাটা কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের আচরণটা কেমন তা দেখার বিষয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।”
ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংরক্ষিত আসনের সাংসদ কামরুন নাহার, এএসডির নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহীদ মাহমুদ, পুলিশ উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের ডিসি ফরিদা ইয়াসমীন, ইউনিসেফের সামাজিক নীতি বিশেষজ্ঞ হাসিনা বেগম, আইএলও’র ন্যাশনাল প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মনিরা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান প্রমুখ।