মাদকের যথাযথ প্রমাণ পেলে তাকেও ছাড়া হবে না: শিল্পমন্ত্রী

কক্সবাজারের সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে ইঙ্গিত করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, মাদক সংশ্লিষ্টতার ‘যথাযথ প্রমাণ পেলে’ তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2018, 01:33 PM
Updated : 18 July 2018, 01:36 PM

বুধবার সচিবালয়ে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী জানান, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট ৩৭ হাজার ২২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

“মাদক সরবরাহকারী, অর্থ লগ্নিকারী, চিহ্নিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তার কারণে এ অভিযান অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।”

তবে অভিযানে এখন পর্যন্ত কতজন নিহত হয়েছেন সে বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত মে মাসের মাঝামাঝিতে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে সময় মাদক কারবারে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি প্রায় প্রতি রাতেই পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হন।

১৫ দিনের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলিতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়, যাদের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে বদির এক বেয়াইও ছিলেন।

কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ-উখিয়া) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বদি ও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মাদক পাচারে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। খোদ সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে মাদক মাদকপাচারে মদদদানের অভিযোগ উঠে এসেছিল। তবে বদি বরাবরই মাদক পাচারে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর ফের আলোচনায় উঠে আসেন সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। ফেইসবুকে তাকে নিয়ে সরব হন অনেকে। রাজনীতিকদের মধ্য থেকেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি ওঠে।

অভিযান শুরুর পর জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ বলেছিলেন, ‘মাদক সম্রাট’ তো সংসদেই রয়েছেন।

আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, “সবার আগে নিজের ঘরের মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আপনাদের কক্সবাজারের টেকনাফের এমপি, তাকে তো জামিন দিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মহানন্দে এই ব্যবসা শুরু করেছেন।”

এই প্রেক্ষাপটে ওই অভিযান চলার মধ্যেই গত ১ জুন ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরব চলে যান আব্দুর রহমান বদি। এরপর তিনি দেশে ফেরেন জুনের মাঝামাঝিতে ঈদুল ফিতরের পরপর।

এই প্রেক্ষাপটে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বদিকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।

প্রশ্নোত্তরে তাকে বলা হয়, মাদকের ‘গডফাদার’, বিশেষ করে কক্সবাজারের একজন সাংসদ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

জবাবে তিনি বলেন, “প্রমাণ সাপেক্ষে ধরা হবে। তার ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড়া হবে না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
 
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠিনভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, মাদকের সাথে যারা জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না।”

মাদক পাচার বন্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আজ সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিজিবির সাথে অন্যান্য সংস্থাগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা বেশি আসে। সে পথে বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।”

 ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে’ যারা ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচার চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “একটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনা ঘটবে না-এটা আশা করা ঠিক না।

“ঘটতে পারে। কিন্তু ঘটনা ঘটার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কী- এটা হল লক্ষণীয় এবং সেখানে সরকারের পদক্ষেপ কী সেটাই লক্ষণীয়।”