মানসিক অসুস্থতার মিথ্যা সনদ দিলে জেল-জরিমানা

কোনো চিকিৎসক উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানসিক অসুস্থতার মিথ্যা সনদ দিলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2018, 09:19 AM
Updated : 16 July 2018, 09:38 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯১২ সালের একটি আইনকে হালনাগাদ করে নতুনভাবে বাংলায় রূপান্তার করে এই আইন করা হচ্ছে।

“বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত নাগরিকদের মর্যাদা সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, সম্পত্তির অধিকার ও নিশ্চিতকরণ, পুনর্বাসন ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে একটি যুগোপযোগি আইন প্রণয়নের অংশ হিসেবে এই আইন করা হচ্ছে।”

প্রস্তাবিত আইনে ৩১টি ধারা রয়েছে জানিয়ে জিয়াউল বলেন, প্রস্তাবিত আইনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল কার্যক্রম পরিচালনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

“মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রদান এবং এ সংক্রান্ত সংক্ষুব্ধতায় প্রতিকারের লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।”

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিষয়ক হাসপাতাল স্থাপন, পরিচালনা ও মানসম্মত সেবা দেওয়ার বিষয়েও খসড়া আইনে প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব জিয়াউল।

তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুসস্থতা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা সনদ দিলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

“অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোনো নির্দেশ বাস্তবায়ন না করলে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

জিয়াউল জানান, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে কোনো বিধান না মানলে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, ছয় মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় একটি অধিদপ্তর গঠনের বিধান রেখে গত ৩ জানুয়ারি ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

ওই দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি লাইসেন্সবিহীন মানসিক হাসপাতাল চালালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধ আবার করলে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

“মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে অপরাধের কাজে ব্যবহার করলে প্ররোচনাকারীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের জন্য পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে। জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক।

“এই আইন কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে যে মানসিক হাসপাতালগুলো আছে সেগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে। বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া, নবায়ন, ফি- এগুলো বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।”