সোমবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
পানামা পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাসান রাজাকে মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কোম্পানির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছে।"
তিনি দাবি করেন, পানামা পেপার্সে তাদের নাম নেই। এসব তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন।
“একটি ন্যাশনাল পত্রিকা লিখেছিল যে আমাদের নাকি নাম আছে। ২০১৬ সালে পানামা পেপার্স প্রকাশ পেয়েছিল, আমাকে তো এখন ডাকার কথা না। পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছিল তাদের তখন ডাকা হয়েছিল। তখন আমাদের ডাকে নাই।
“আমাদের কমপিটেটর উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পত্রিকার মাধ্যমে আমাদের নাম প্রকাশ করেছে। আপনারাও ওয়েবসাইটে গিয়া দেখতে পারেন। আমাকে জিজ্ঞেস করার কিছু নেই। জাস্ট হ্যারাসমেন্ট!"
দুদক ইউনাইটেড গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের আয়কর দেওয়ার নথি দেখতে চেয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, সেসব নথিপত্র তারা দুদকে জমা দেবেন।
হাসান রাজা বেরিয়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে ইউনাইটেড গ্রুপের পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদকেও আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তা আখতার হামিদ ভূঞা।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তারাও পানামা পেপার্সে নাম নেই বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, “দুদক তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে থাকে। এসব তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে প্রাথকি প্রমাণ পেলেই পরবর্তি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।”
গত ৮ জুলাই আখতার হামিদের স্বাক্ষরে ইউনাইটেড গ্রুপের এই চার জনের পাশাপাশি প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা তিন ব্যবসায়ীকে তলব করে আলাদা নোটিস পাঠানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে মঙ্গলবার তলব করা হয়েছে বলে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।
দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ২০১৬ সালের মে মাসে পানামার ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার বিপুল সংখ্যক নথি ফাঁস করে দেয়, যা পানামা পেপারস নামে পরিচিতি পায়।
বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেই তথ্য বেরিয়ে আসে সেসব নথি থেকে।
পানামা পেপার্সে দেড় ডজনের মতো বাংলাদেশির নাম আসার পর দুদক তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়। সেজন্য তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করা হয়।
সেই অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগেই ২০১৭ সালের শেষ দিকে বারমুডার ল ফার্ম অ্যাপলবির গ্রাহকদের ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি ফাঁস করে আইসিআইজে। সেখানে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ আরও দেড় ডজন বাংলাদেশির নাম আসে।
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে গোপনে টাকা লগ্নিকারী হিসেবে বাংলাদেশিদের নাম এলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে সে সময়।
খোদ সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সংসদে বলেন, “অর্থপাচার, ঋণ জালিয়াতির তদন্ত আশা করি করা হবে, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাকিস্তান পানামা পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারলে আমরা পারছি না।”
দুদকের একজন কর্মকর্তা গত ফেব্রুয়ারিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কমিশনের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞার নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল কাজ করছে। ওই দলের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে সম্পদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে।
“পানামা পেপার্সের সাথে যে ১৫ জনের নাম এসেছে তাদের সবাইকে নোটিস দেওয়া হলেও নয়জন কমিশনে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে স্থায়ী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। সবার নাম ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে।”
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে যে সকল ব্যক্তির নাম এসেছে তাদের অনুপার্জিত আয়ের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করবে এবং অনুসন্ধানে যদি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য কোনো প্রেডিকেটেড অফেন্স পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কমিশন প্রাপ্ত তথ্যাদি বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইইউ, পুলিশের সিআইডি অথবা রাজস্ব বোর্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হবে।”
মুদ্রাপাচার বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি (৮৯৭ কোটি ডলার) পাচার হয়; তার আগে ১০ বছরে ৭৫ বিলিয়ন ডলার হারায় বাংলাদেশ।