মুক্তিযোদ্ধার বয়স নিয়ে পরিপত্র কেন অবৈধ নয়: হাই কোর্ট

১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জারি করা সংশোধিত পরিপত্র কেন আইনগতভাবে কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2018, 06:42 PM
Updated : 15 July 2018, 06:42 PM

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসানের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করে।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, এ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের মহাপরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন এবিএম আলতাফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এআরএম কামরুজ্জামান কাকন ও শুভ্রজিৎ ব্যানার্জি।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

আইনজীবী কাকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাদী মাহমুদ হাসান ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগ দেন।

“তার জন্ম তারিখ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তার বয়স হয় ১২ বছর ৪ মাস ১২ দিন।” 

এ পরিপ্রেক্ষিতে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর থেকে গত ২ মার্চ এক অফিস আদেশে বাদীকে জানানো হয়, ১৭ জুলাই তার বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী ১৮ জুলাই থেকে তার অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে।

এ অবস্থায় তিনি ছুটি ভোগ করতে চাইলে তাকে আবেদন করতে বলা হয়।

পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এক অফিস আদেশে জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে যে সংশোধিত পরিপত্র জারি করে তার সঙ্গে বাদীর বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

কাকন বলেন, পাবলিক সার্ভিস রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৪ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পাওয়ার কথা।

“ফলে তার প্রতি যে অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টতই এ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

এ কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট, সংশোধিত পরিপত্র ও অফিস আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে গত সপ্তাহে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

এই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারির পাশাপাশি অফিস আদেশটির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে।

২০১৬ সালে প্রথমে গেজেট প্রকাশ করে বলা হয়, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর।”

এরপর গত ১৭ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।

স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে চার দশক পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার।