ঢাবিতে ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার

প্রকাশ্য দিবালোকে বিনা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জ্যেষ্ঠ দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2018, 05:01 PM
Updated : 16 July 2018, 11:11 AM

বহিষ্কৃতরা হলেন- সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোল্লা মোহাম্ম আল ইমরান পলাশ, ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইসোল) বিভাগের মাহমুদ অর্পন এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাত উল্লাহ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী রোববার সন্ধ্যায় এই তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের কথা জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অর্থনীতি বিভাগের ওই শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পর সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তদের শনাক্তকরণের প্রেক্ষিতে এবং দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট বিবেচনা করে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের (রেজিস্টার বিল্ডিং) সামনে মল চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকেয়া গাজী লীনা ও আসাদুজ্জামান প্রান্তকে পিটিয়ে আহত করে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুপুরে প্রক্টর বরাবর আবেদন করেন অর্থনীতি বিভাগের ওই দুই শিক্ষার্থী। তাদের সাথে বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষার্থীও ছিলেন।

শাস্তির আবেদন করতে এসে প্রক্টরের উদ্দেশে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমার ক্যাম্পাসে আমি ঘুরব, সেজন্য আইডি কার্ড দেখাতে হবে কেন? আর একজন শিক্ষার্থীকে আরেকজন শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড চেক করার অধিকার কে দিয়েছে?

“আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। রাজনীতি বুঝি না, এ ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

এ ঘটনায় শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থীরা।

তখন প্রক্টর গোলাম রব্বানী তাদের বলেন, “হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ধরে জড়িতদের বিচার করব। হলের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”

তার কয়েক ঘন্টা পরই প্রক্টর সাংবাদিকদের তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান।

শনিবারের ওই ঘটনা নিয়ে লীনা ফেইসবুকে লিখেছেন, তারা দুজন কার্জন হলে যেতে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় ১০-১২ ছাত্র তাদের পথরোধ করে উদ্ধত ভঙ্গিতে পরিচয় জানতে চান ও আইডি কার্ড দেখাতে বলেন। পরিচয় দিয়ে কারণ জানতে চাইলেও তারা কার্ড দেখাতে বলে।

কিন্তু কার্ড দেখানোর পর তাদের একজন ‘প্রথম বর্ষের ছেলে কি তোরে চার্জ করতে পারে না? ১ম বর্ষের পোলাপানের হাতে মাইর খাইতে খুব মজা লাগব’ বলে আসাদকে থাপ্পড় মারে। এসময় সবাই আসাদকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। লীনা বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

মেরেই তারা সূর্যসেন হলের ভেতরে ঢুকে গেলে আসাদও পেছন পেছন ঢুকে মারধরের কারণ জানতে চান। তখন তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দিয়ে অন্তত ১৫ জন গেস্টরুম থেকে স্ট্যাম্প ও কাঠ নিয়ে এসে আসাদকে বেধরক পেটায়। লীনা আবারও তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়, এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায়।

ঘটনা জানাতে রাত ৯টার দিকে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীকে ফোন দিলে তিনি পাল্টা জানতে চান, ওই ছাত্রী এত রাত পর্যন্ত বাইরে কেন, ওই ছাত্রী কোন হলের আবাসিক ইত্যাদি।

পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল তাদের বক্তব্য শুনে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত লিখতে বলেন। আহত ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন এবং তাদের চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করেন।

মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। হলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করা হবে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন অনুসারে আমরা ন্যায্য বিচার করব।

“ভবিষ্যতে যেন ঢাবি ক্যাম্পাসে আর এমন ঘটনা না ঘটে।”

সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক তারেক জিয়াউর রহমান সিরাজীর নেতৃত্বে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।