এসএসএফের ৩২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উদযাপন অনুষ্ঠানে রোববার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা রাজনীতি করি, গণমানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে; তাদের সঙ্গে এই যোগাযোগটা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। এই কথাটা সবসময় বলি।”
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত এই বাহিনীর কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু তাদের ছকে বাঁধা যে দায়িত্ব; তা থেকে তাদের একচুলও নড়াতে পারি না, মাঝে-মধ্যে একটু রাগও করি।
“সরকার প্রধান হিসেবে আমার কোনো বিলাসবহুল জীবন-যাপন, অথবা কোনো কিছু চাওয়া পাওয়া আমার নেই। আমার একটাই চাওয়া দেশের মানুষের উন্নতি, মানুষের কল্যাণ। মানুষের জন্যই আমার কাজ। যে মানুষের জন্য কাজ করি; সে মানুষগুলো থেকে যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, তাহলে কিন্তু আমাদের জীবনটা অর্থহীন হয়ে যাবে। এই যোগাযোগটা যেন থাকে।”
“আমরা যে রাজনীতি করি, সত্যি কথা বলতে আমাদের ক্ষমতার উৎসই হলো জনগণ।”
১৯৮৬ সালে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং সরকার ঘোষিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়।পরে, এই বাহিনীর নামকরণ করা হয় ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’।
পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে এই বাহিনীর দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এবার নিয়ে তিন বার আমি দায়িত্ব পালন করছি। স্বাভাবিকভাবে খুব কাছে থেকে তাদের কর্মনিষ্ঠা, একাগ্রতা, পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা লক্ষ্য করেছি।”
এসএসএফ সদস্যরা দায়িত্বপালনে সব সময় খুবই নিষ্ঠাবান বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের বিদেশি ভিআইপি অতিথিরা এসএসএফের পেশাদারিত্বের যখন প্রশংসা করে যান। তখন আমি গর্ববোধ করি। আমি একজন মা। এসএসফের সদস্যদের আমি সন্তানের মতো দেখি। আমি চাই এই দায়িত্ববোধটা যেন সব সময় থাকে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে, যুগের পরিবর্তন হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি সর্ম্পকে যারা অপকর্ম করছে তারা কিন্তু যথেষ্ট পারদর্শী- বিষয়টা সব সময় মাথায় রাখতে হবে।”
নিজের নিরাপত্তায় থাকা এই বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তায় নিজের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন সকালে নামাজ পড়ে আমি ছেলেমেয়ের জন্য যেমন দোয়া করি, দলের লোকদের জন্য দোয়া করি, দেশের মানুষের জন্য যেমন দোয়া করি সাথে সাথে যারা আমার নিরাপত্তা সঙ্গে জড়িত তাদের হেফাজত চেয়ে সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি। যেন আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি না হয়।
“আমি বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, চোখের সামনে দেখেছি আমার দলের বহু নেতা-কর্মীদের নিহত হতে।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জানি না, ভবিষ্যতে দেখা হবে কিনা। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদের মতো সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু আমাদের দেশে না.. সারা বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা। সেই সাথে আমাদের দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য হত্যা, ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদী তৎপরতা যা সব সময় একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে।”
প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সদা পরিবর্তনশীল এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের এসএসএফ অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মান সব সময় উন্নত হচ্ছে। আমরা সেই সাথে সাথে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীন সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনীর মহাপরিচালক মো.সফিকুর রহমান কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে চতুর্থ প্রজন্মের ভেহিকেল মাউন্টেড ও পোর্টেবল জ্যামার, ড্রোন গান ও অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম এবং অত্যাধুনিক কমান্ড ভেহিকেল সংযোজনের কথা জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, মুখ্য সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।