আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদ ঢাবিতে

নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা । 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2018, 07:52 PM
Updated : 11 July 2018, 07:52 PM

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে কয়েকশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। 

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সকল হামলার নিন্দা ও বিচার দাবি করেন। 

মানববন্ধনে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্যাম্পাসে যেসব হামলা হয়েছে আমরা সকল হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও শহীদ মিনারে একটি ছা্ত্র সংগঠন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ওপর যে নৃশংসভাবে হামলা করেছে, তার বিচার দাবি করছি।”

কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, “আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে সর্মথন করে আসছি। কারণ এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন। কিন্তু আমরা তখনি শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, যখনি কেবল শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন এলাকার শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

“আজকে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু তারাও নানা ভয়ভীতির কারণে আসতে পারছে না। এখানে একটি বিষয় বলা দরকার, যারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের বিচার না করে উল্টো যারা নির্যাতন-নিপীড়ন ও হামলার শিকার হয়েছে,তাদেরকে রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে। এটা কেমন বিচার?”

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “রাষ্ট্র যেভাবে হুকুম দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঠিক সেভাব কাজ করছে।”

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তামজীম উদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী প্রমুখ।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ও।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিসহ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করা, মানববন্ধন ও মিছিলগুলোতে হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সিট বণ্টনের দায়িত্ব হল প্রশাসনের নেওয়া, কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগদানে বাধ্য না করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসক তার উপর প্রদত্ত দায়িত্ব পালন না করে নিপীড়নমূলক অবস্থান নিলে তাকে অপসারণ করা। 

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংবাদ সম্মেলন

ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে কর্তৃপক্ষ যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল,  তাকে 'ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার' ও 'জনগণের সাথে ছাত্রদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র' মনে করছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। 

নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

বুধবার মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর একথা বলেন।

প্রগতিশীল ছাত্রজোট তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেছে। এগুলো হচ্ছে- সকল অগণতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ঐতিহাসিকভাবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত ট্যাগ দিয়ে একে রক্ষণশীল করার সিদ্ধান্ত বাতিল এবং হলগুলোতে সভা-সমাবেশের জন্য প্রভোস্টের অনুমতির সিদ্ধান্ত বাতিল। 

ছাত্রলীগের বক্তব্য

বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

বুধবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, "প্রশাসনকে এমন সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ। আগেও এরকম নিয়ম ছিল যে শহীদ মিনারসহ যে কোনো স্থানে মিছিল, মিটিং বা মানববন্ধন করতে করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হতো।

“এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই এ জন্য কেননা আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন বাইরের লোকজন এসে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা মেইন টার্গেট হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একারণেই নেয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করা গেলে সারা বাংলাদেশকেই অস্থিতিশীল করা যাবে।”

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বাইরের নেতাকর্মীরাও মধুর ক্যান্টিনে আসতে হলে এই নিয়মের মধ্যে পড়বেন বলে জানান জাকির।

তিনি বলেন, “কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে বিশৃঙখলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং ছাত্র জনতাকে নিয়ে আমরা মাঠে আছি যাতে কেউ অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে।”