দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্মারক

মহেশখালীতে ৩৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যা থেকে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2018, 12:46 PM
Updated : 11 July 2018, 04:31 PM

কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)।

বর্তমানে ধুঁকতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের বড় কোম্পানিটি পিডিবির এই প্রকল্পটির পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি সামিট কর্পোরেশনের আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও বিনিয়োগ করছে।

বুধবার জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি।

এর আগে গত বছর পটুয়াখালীর পায়রায় এলএনজিভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। ওই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতাও ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।

মহেশখালীতে নতুন প্রকল্পটিতে ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে চার দশমিক চার বিলিয়ন (৪৪০ কোটি) ডলার; যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবির পক্ষে চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ এবং জিএই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাসেল স্টোকস সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেন।

এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৬০০ একর ভূমি উন্নয়নে ১৬০ কোটি ডলার এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২৮০ কোটি ডলার ব্যয় হবে।

অনুষ্ঠানে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, দেশের একক কোনো প্রকল্পে এটি হতে যাচ্ছে অন্যতম বড় বিনিয়োগ।

জেনারেল ইলেকট্রিক পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে একই দিন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি সামিট করপোরেশন ও জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশনের সঙ্গে মিলে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।

পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জিএই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট রাসেল স্টোকস বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে অবদান  রাখতে পেরে তারা আনন্দিত।

মহেশখালীতে এই বিনিয়োগ প্রকল্পের আওতায় জিইর প্রধান পণ্য ৯এইচএ গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করে ৬০০ মেগাওয়াট করে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি ইউনিট, মোট তিন লাখ ৮০ হাজার মিটার গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল, এক লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি তেলের টার্মিনাল ও ৩০০ মেগাওয়াটের একটি এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে টারবাইনসহ ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসা জেনারেল ইলেকট্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইক্যুইটি বিনিয়োগে যাচ্ছে। এর আগে ছোট্ট পরিসরে বিনিয়োগ করলেও বুধবারের সমঝোতাগুলোতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

পিডিবির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জিইর সঙ্গে পিডিবি একটি যৌথমূলধনী কোম্পানি গঠন করবে।

ওই প্রকল্পের ৩০ ভাগের মালিকানা পাবে জেনারেল ইলেকট্রিকের সুইজারল্যান্ড শাখা, ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে পিডিবির এবং বাকি ১৯ ভাগ শেয়ার পিডিবি ও জিইর মধ্যে সমাঝোতার ভিত্তিতে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যুক্ত হওয়া জেনারেল ইলেকট্রিকের জন্য সুখবর হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একসময় বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানি ছিল এটি; কিন্তু মন্দার ধাক্কায় এর বাজার মূল্য পড়তে থাকে। গত বছর বাজারমূল্য ১৪০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছিল কোম্পানিটি।

গত জুন মাসে ‘ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ’ থেকে বাদ দেওয়া হয় জেনারেল ইলেকট্রিককে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে লেনদেনের চিত্র এই সূচক দেখানো হয়।   

অনুষ্ঠানে মার্শা বার্নিকাট

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।

২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে গ্যাস, এলএনজি, কয়লাসহ নানা জ্বালানি রয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, এ লক্ষ্যে ১৫ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ করা হচ্ছে, ৪ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে এবং ২২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।