খসড়া ডিজিটাল আইনে সংশোধনের ১১টি ক্ষেত্র পেয়েছে সংসদীয় কমিটি 

বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় সংশোধনের জন্য ১১টি ক্ষেত্র পেয়েছে সংসদীয় কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2018, 03:18 PM
Updated : 4 July 2018, 03:18 PM

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বুধবারের বৈঠকে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো উপস্থাপিত হয়, তবে কোনো সংশোধনী চূড়ান্ত হয়নি।

বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই তিনটি সংগঠনের সঙ্গে আগামী ১৬ জুলাই আবারও বসবে সংসদীয় কমিটি। ওই দিন নিজেদের মতামত জানাবে সংগঠনগুলো।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু  বিষয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি ছিল। সংসদীয় কমিটি কমিটি ১১টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে। সাংবাদিকরা আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। আগামী ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে।”

এর আগে গত ২২ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে প্রস্তাবিত আইনের আটটি ধারা নিয়ে নিজেদের আপত্তি তুলে ধরেছিল সম্পাদক পরিষদ। ওই বৈঠকে অ্যাটকো, বিএফইউজেও নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়।

সংসদীয় কমিটির গত ২২ মে’র বৈঠক (ফাইল ছবি)

গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’র খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পর থেকে এর সমালোচনা হচ্ছে।

সাংবাদিকরা প্রস্তাবিত আইনটির ৩২ ধারায় সমালোচনা করে বলছেন, এই আইনের ফলে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে।

তবে সব উদ্বেগের প্রশমন ঘটিয়েই আইনটি পাস করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলার পর গত ৯ এপ্রিল সংসদে আইনটি উত্থাপন করেন মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। এরপর তা সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়, সংসদীয় কমিটি প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে আপত্তির বিষয়গুলো জানতে উদ্যোগ নেয়।

ইমরান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে। এর সংজ্ঞায়, সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে, তা প্রযোজ্য হবে।

“২৫ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারা (এমন কোনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করা, যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে) বাতিল এবং সব মিলে দুটি উপধারা করা, ২১ ধারায় সাজা যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।”

এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ কমানো এবং কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি জানান।

বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, সংসদীয় কমিটি যে সংশোধনী প্রস্তাব করেছে, তা খতিয়ে দেখার সুযোগ তারা পাননি বলে তাৎক্ষণিক মতামত দেননি। এসব সংশোধনীর বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।

সম্পাদক পরিষদ যেসব আপত্তি জানিয়েছিল, সেগুলো পূরণ হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আনাম বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে, তবে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। আলোচনা চলছে। আশা করি আরও ব্যাপক আকারে আলোচনা হবে।”

প্রস্তাবিত আইনটি মুক্ত মতের চর্চা রুদ্ধ করবে বলে দাবি উঠেছে

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “যে যে পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন ছিল, সে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে। ওনারা (সাংবাদিক পক্ষ) বলেছেন, এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তারা তাদের নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করবেন। ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে।"

প্রস্তাবিত আইনে 'ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির' সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এতে সাংবাদিকেদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এ বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হবে।

বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, “অফিসয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অংশ নেন।

কমিটির আমন্ত্রণে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও অ্যাটকোর সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু বৈঠকে যোগ দেন।