কোটা আন্দোলনের আরেক নেতা ফারুকও গ্রেপ্তার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা ফারুক হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পরিবার জানানোর পর তাকে দুই মাস আগের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2018, 11:15 AM
Updated : 3 July 2018, 11:18 AM

ফারুক হাসান আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী, থাকেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। 

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ফারুককে নিয়ে দুজন গ্রেপ্তার হলেন। এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে।

ফারুককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে গত ৯ এপ্রিল শাহবাগ থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায়। ওই মামলায় বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফাইল ছবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ক- নুরুল হক নুরু (মাঝে), তার ডান পাশে ফারুক হাসান এবং বাম পাশে রাশেদ খান।

সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গেলে ফারুকসহ আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে তুলে দেয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

তখন আহত অবস্থায় ফারুককে মোটর সাইকেলে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন রহমান।

তিনি দাবি করেন, উত্তেজিত ছাত্রদের হাত থেকে রক্ষা করে তিনি ফারুককে ‘নিরাপদ স্থানে’ পৌঁছে দিয়েছেন।

আল-আমিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “উত্তেজিত ছাত্ররা তাকে মারধর করছিল। এ অবস্থায় আমি তাকে উদ্ধার করে একটা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিই৷ এ অবস্থায় থানাই তো সবচেয়ে নিরাপদ। অন্য কোথাও নিলে তো আবার কেউ এসে ওকে মারত।”

এরপর থেকে ফারুকের সন্ধান না পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল তার পরিবার।

ফারুকের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল থেকে কয়েকটি থানায় ঘুরেও ভাইয়ের খোঁজ পাননি তিনি।

“আমি সকাল থেকেই শাহবাগ থানা, নিউ মার্কেট থানা, রমনা থানা ও ডিবির কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। তারা সবাই বলেছে, তাদের ওখানে ফারুক নেই৷ শাহবাগ থানায় জিডি করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা আমার জিডি গ্রহণ করেনি। থানা থেকে একজন আমাকে বলেছে, কোর্টে গিয়ে খোঁজ নিতে।”

এর মধ্যে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হাসান সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিবি তো ওকে কোর্টে পাঠিয়েছে শুনলাম। তাও ডিবির কাছে কনফার্ম হয়ে নেন।”

ফারুক হাসান

বিকাল নাগাদ গোয়েন্দা পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ফারুককে ঢাকার আদালতে হাজির করানোর খবর আসে।

ফারুকের সঙ্গে তরিকুল ইসলাম ও জসীম নামে আরও দুজনকে শাহবাগ থানার মামলাটিতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন ডিবির পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকী। তিনি মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। 

সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের। রাতভর ওই সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে প্রায় সব কিছু ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়। তার একটিতে গ্রেপ্তার হলেন ফারুক।

সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিরবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো রিমান্ড আবেদন ছিল না। কোনো আইনজীবীও তাদের পক্ষে জামিন চায়নি। এরপর মহানগর হাকিম সুব্রত ঘোষ শুভ তিনজনকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।”

আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে ডিবির পরিদর্শক বাহাউদ্দিন বলেছেন, ৯ এপ্রিলের মামলায় গ্রেপ্তার এই তিনজন গত ৩০ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলনবিরোধীদের হাতে জখম হয়েছিলেন।