রোহিঙ্গারা বিচার চায়, বাড়ি ফিরতে চায়: গুতেরেস

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখলেন, তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা নিজের কানে শুনলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

রিয়াজুল বাশারও শঙ্কর বড়ুয়া রুমি, কক্সবাজার থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 06:37 AM
Updated : 11 July 2018, 08:53 AM

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘোরার ফাঁকেই জাতিসংঘ মহাসচিব এক টুইটে বললেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি লিখেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হত্যা আর ধর্ষণের যে বিবরণ তিনি শুনেছেন তা অকল্পনীয়। 

“তারা বিচার চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে চায়।”

 

সোমবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা কক্সবাজারে পৌঁছান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।

কক্সবাজারে নেমে প্রথমে হোটেল সাইমন বিচ রিসোর্টে যান তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে তাদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করবেন।

এরপর তারা যান উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্প। মূলত নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ওই ক্যাম্পে রাখা হয়। সেখানে নিবন্ধন শেষে তাদের পাঠানো হয় ক্যাম্পে।

ট্রানজিট ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন গুতেরেস ও কিম। তারা কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের আরও কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে দেখবেন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর গত দশ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ পাওয়া গেছে তাদের কথায়।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলে আসছে,বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমারকে।

রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে দুই দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসেন আন্তোনিও গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম। তারা জানিয়েছেন, এ সঙ্কট এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

আর রোহিঙ্গা সঙ্কটে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, এই সঙ্কট উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও অনেক কাজ বাকি, আর সেজন্যই তিনি ও জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে এসেছেন।  

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মুরারও কক্সবাজার সফরে গুতেরেস ও কিমের সঙ্গে রয়েছেন। 

কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তারা সায়মান বিচ রিসোর্টে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

গুতেরেস এর আগে ইউএনএইচসিআরের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই হবে তার প্রথম সফর। আর বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দুই বছর আগেই একবার বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।