আটপৌরে নাগরিক দিনলিপির মাঝে ফুরসত খুঁজে নিয়ে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিবারের মত এবারও আয়োজন করেছে বর্ষা উৎসব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান শুক্রবার ছুটির সকালে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ উৎসবের উদ্বোধন করে বলেন, “স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ঋতু হল এই বর্ষা। যারা প্রকৃতিকে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে অবলোকন করেন, তারাই নগরে এমন উৎসবের আয়োজন করেন।”
তার প্রত্যাশা, বর্ষার জলসিঞ্চনে সিক্ত হয়ে নাগরিকরা প্রকৃতিকে ভালোবেসে উদার মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাবে। নগরে তারাই প্রাণের সঞ্চারণ করবে।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ সভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরী এই ঋতু উৎসবের মাহাত্ম্য তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
সকালের শুরুতে আকাশে তখন আষাঢ়ে মেঘের ওড়াউড়ি। বর্ষার আকাশ কখন গরজায়- কে জানে! মেঘ রৌদ্রের লুকোচুরিতেই চলে গান-নৃত্যের পর্ব।
প্রাণ প্রকৃতির বন্দনায় শেখর মণ্ডল পরিবেশন করেন বর্ষার রাগ ‘মিয়া মালহার’।
একক সংগীত পর্বে ফাহিম হোসেন চৌধুরী পরিবেশন করেন রবীন্দ্র সংগীত ‘পূব হাওয়াতে দেয় দোলা’। লিনা তাপসী খান গেয়ে শোনান নজরুলসংগীত ‘যাও মেঘ দূত দিও প্রিয়ার হাতে’। সুমন মজুমদার শোনান নজরুল সংগীত ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না’। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অনিমা রায় শোনান ‘বহু যুগের ও পার হতে আষাঢ় এল’।
একক সংগীত পরিবেশন করেন মামুন জাহিদ খান, দিলারা আফরোজ খান, আরিফ রহমান, আবিদা রহমান সেতু, আঁখি বৈদ্য, রত্না সরকার, মাহজাবিন রহমান শাওলী।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। নটরাজের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে।
‘মেঘের গায়ে, নূপুর পায়ে, নাচে বরষা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা করে স্পন্দন; পরে নৃত্য পর্বে অংশ নেয় বাফা, স্বপ্ন বিকাশ কেন্দ্র।
আবৃত্তি পর্বে জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকার জন্য রূপকথা’ আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম কাকলী; মাশকুর-এ-সাত্তার-কল্লোল আবৃত্তি করেন নির্মলেন্দু গুণের ‘পনের পাঁচ চুরাশি’।
দলীয় সংগীত পর্বে লোকসংগীত ‘কলকল ছলছল নদী করে টলমল’ পরিবেশন করেন স্বভূমি লেখক-শিল্পী কেন্দ্রের শিল্পীরা।
পরে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী শোনায় রবীন্দ্র সংগীত ‘বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ় তোমার মালা’। সমস্বরের শিল্পীরাও এ পর্বে অংশ নেন।
নাগরিক সকালের এই বর্ষা উৎসব শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি ছাড়াই শেষ হয়।