কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে বড় ধরনের গোলযোগহীনভাবে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।
Published : 26 Jun 2018, 09:16 PM
মঙ্গলবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই ফলাফল জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল।
পরে বেলা ১২টার দিকে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে বসানো নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
৪১৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট।
অর্থাৎ, সাবেক সাংসদ হাসান সরকারের চেয়ে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর।
মেয়র পদের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান মিনার প্রতীকে ১ হাজার ৬৫৯ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন হাতপাখা প্রতীকে ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন মোমবাতি প্রতীকে ১ হাজার ৮৬০ ভোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কাজী মো. রুহুল আমিন কাস্তে প্রতীকে ৯৭৩ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ১ হাজার ৬১৭ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ৪১৬ কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৯টি। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৬৩৮ ভোট বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। ফলে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৩০ হাজার ১১১টি।
নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব ফরহাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ৮টার পরে কমিশনে ফলাফলের বার্তা শিট পাঠিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। স্থগিত কেন্দ্রের ২৩ হাজার ৯৫৯ ভোট বাদ দিয়ে এ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৮ শতাংশ।”
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লাহ খানকে এক লাখ ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিএনপি নেতা এম এ মান্নান। এবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বাদে দিয়ে বিএনপি প্রার্থী করে প্রবীণ নেতা হাসান সরকারকে।
অন্যদিকে গতবার প্রার্থী হতে চেয়েও দলের সমর্থন না পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর এবার দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন।
৭০ বছর বয়সী হাসান সরকার গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সংসদ সদস্যও ছিলেন। তার সময়ে এবং বিদায়ী মেয়র মান্নানের সময়ে গাজীপুরে ‘প্রত্যাশিত উন্নয়ন না হওয়ার’ বিষয়টি তুলে ধরে পরিবর্তন আনতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বলেছেন, শতভাগ সুষ্ঠু না হলেও এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য।
ভালোভাবে না জেনে অনিয়মের অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি প্রার্থীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনও দাবি করেছে বন্ধ হওয়া ৯ কেন্দ্র বাদ দিলে বাকি ৪১৬টি কেন্দ্রে ‘কোনো ধরনের অনিয়ম ছাড়াই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন হয়েছে।
তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, শতাধিক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ‘জাল ভোটের মহোৎসব’ চলেছে গাজীপুরে।
তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “একশটি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে- তাদের এমন অভিযোগকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি। বলুন কোন কোন কেন্দ্রের এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে।”
জাতীয় নির্বাচনের বছর গাজীপুরের এই নির্বাচন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির হুঁশিয়ারি ছিল, তারা এই নির্বাচন দেখে সিদ্ধান্ত নেবে, আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালের নির্বাচনে যাবে কি না।
গাজীপুরের ভোটর চূড়ান্ত ফল আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুধু ইউনিয়ন ও পৌরসভা নয়, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৩৩০ বর্গ কিলোমিটারে দুটি সংসদীয় এলাকায়ও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে।
১৯৯১ সালের পর থেকে সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া জয়ে রাজধানীর কাছাকাছি এই এলাকাকে নিজেদের ‘ঘাঁটি’ ভেবে আসছিলেন দলটির নেতারা।
সেই ‘ঘাঁটিতে’ ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় দলটির আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দেয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার জাহাঙ্গীরকে মাঝি করে সেই গাজীপুরে বিজয়ের বন্দরেই তরী ভেরালো ক্ষমতাসীন দলটি।
গাজীপুর ভোটের আরও খবর