প্রতিষ্ঠার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয় ভোট হচ্ছে মঙ্গলবার। এ সিটি করপোরেশনের প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়ে নতুন মেয়র নির্বাচন করতে যাচ্ছেন ভোটাররা।
Published : 25 Jun 2018, 10:00 PM
টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভাসহ প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ওই বছর ৬ জুলাই নির্দলীয় প্রতীকে হয় প্রথম নির্বাচন।
মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় সব আয়োজন শেষে আবারও ভোটের জন্য প্রস্তুত গাজীপুর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন নিয়ে সবার নজর এখন গাজীপুরের দিকে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সব ধরনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরাও গাজীপুরের নির্বাচনকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। সামনে আরও তিন সিটির নির্বাচন রয়েছে। ভালো নির্বাচনের জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।”
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, “আমরা একটি মডেল নির্বাচন চাই। তা হতে হবে রংপুরের মতো কিংবা নারায়ণগঞ্জের মত নির্বাচন; যাতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও অংশীজনের আস্থা বাড়ে।”
গাজীপুর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল অবশ্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন- প্রার্থী, সমর্থক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- যেদিক থেকেই অনিয়ম হোক না কেন, কঠোরভাবে তা দমন করা হবে।
>> সময়: ভোট চলবে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত
>> ভোটার: ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী
>> পদ: একজন মেয়র, ৫৭ জন কাউন্সিলর এবং ১৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা
>> কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের ২৭৬১টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে
>> ইভিএম: ছয়টি কেন্দ্রে (১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২) ভোট হবে নতুন ইভিএমে।
>> গণনা শেষে ফল ঘোষণা হবে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে।
প্রার্থী সংখ্যা
# মেয়র পদে ৭ জন
# সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন
# সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন (৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত)।
# মেয়র পদে ছয় জন দলীয় প্রতীকে ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভোট হচ্ছে।
মেয়র হতে চান ৭ জন
দল | প্রার্থী | প্রতীক |
বিএনপি | মো. হাসান উদ্দিন সরকার | ধানের শীষ |
আওয়ামী লীগ | মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম | নৌকা |
সিপিবি | কাজী মো. রুহুল আমিন | কাস্তে |
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট | মো. জালাল উদ্দিন | মোমবাতি |
ইসলামী ঐক্যজোট | ফজলুর রহমান | মিনার |
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ | মো. নাসির উদ্দিন | হাত পাখা |
স্বতন্ত্র | ফরিদ আহমদ | টেবিল ঘড়ি |
কর্মী বাহিনী
>> গাজীপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল
>> তার সঙ্গে ১৯ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ২১ জন সহায়ক কর্মকর্তা, ২ জন পর্যবেক্ষক সমন্বয়কারী, ৫৭ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক, ৪২৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।
>> সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে ৯ হাজারের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন এ নির্বাচনে।
নজর রাখবেন যারা
আটটি সংস্থার ২০৬ সদস্য পর্যবেক্ষক; ঢাকা থেকে অনুমতি নেওয়া মুদ্রিত সাংবাদপত্রের ২৫৪ জন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৩০৪ জন ও অনলাইন নিউজ পেপারের ১০৯ জন সাংবাদিক; স্থানীয়ভাবে আরও অন্তত পাঁচশ সাংবাদিক এবং ইসির ৫৭ জন ‘নীরব পর্যবেক্ষক’ মাঠে থাকবেন।
নিরাপত্তা
# ৪২৫ ভোট কেন্দ্রে দশ হাজারের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি-র্যাবের প্রায় ১২০০ সদস্য থাকবেন টহলে। পুলিশ-আনসারের টহল টিমে রয়েছে পাঁচ শতাধিক লোকবল।
# প্রতিটি কেন্দ্রে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ২২ জন ও ২৪ জন করে সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে ৩৩৭টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন করে এবং ৮৮টি কেন্দ্রে ২২ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
এছাড়া ৫৭ জন নির্বাহী হাকিম, ১৯ জন বিচারিক হাকিম ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠে রয়েছেন আরও ১০ জন নির্বাহী হাকিম।
# পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ান নিয়ে ৫৮টি মোবাইল টিম, ২০টি স্ট্রাইকিং টিম; র্যাবের ৫৮টি টিম এবং ২৯ প্লাটুন বিজিবি থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে।
# তিন কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি নজর রাখা যাবে পরিস্থিতির ওপর।
# চারটি কেন্দ্র (১৩৬, ২৬৩, ৩৪৫ ও ৩৭১ নম্বর কেন্দ্র) থেকে ট্যাবের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল সংগ্রহ করা হবে পরীক্ষামূলকভাবে।
বাজেট
প্রায় ছয় কোটি টাকার ভোট হচ্ছে গাজীপুরে। এর মধ্যে ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ছাড়ও করা হয়েছে। ব্যয়ের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হবে পৌনে তিন কোটি টাকা। বাকি টাকা যাবে আইন-শৃঙ্খলা খাতে।
নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে।
আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলো নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারেন সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী।
শুধু ইউনিয়ন ও পৌরসভা নয়, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৩৩০ বর্গ কিলোমিটারে দুটি সংসদীয় এলাকায়ও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে।
১৯৯১ সালের পর থেকে সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া জয়ে রাজধানীর কাছাকাছি এই এলাকাকে নিজেদের ‘ঘাঁটি’ ভেবে আসছিলেন দলটির নেতারা।
সেই ‘ঘাঁটিতে’ গোলযোগহীন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লাহ খানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ভোটে হারান বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম এ মান্নান।
সেই নির্বাচনে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮ শতাংশে ভোট দেন।
আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থন দিয়েছিল আজমতকে, যিনি ১৯৯৫ সাল থেকে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।
দলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে প্রার্থী হলেও দলের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ব্যালট পেপারে তার নাম থেকেই যায়। তাতে হাজার দেড়েক ভোটও পান জাহাঙ্গীর।
এবার গাজীপুরে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছেন সেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে গতবারের বিজয়ী মান্নানের বদলে বিএনপি এবার প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মো. হাসান উদ্দিন সরকারকে।
বিলম্বিত ভোট
গাজীপুর সিটিতে সর্বাশেষ ভোট হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। ফলে ৮ মার্চ এ সিটিতে নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়েছে।
৩১ মার্চ নির্বাচন কমিশন সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী ১৫ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।
সেই তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১২ এপ্রিল; ১৫-১৬ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২৩ এপ্রিল।
কিন্তু সীমানা নিয়ে এক রিট আবেদনে উচ্চ আদালত ৭ মে এ নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। পরে সর্বোচ্চ আদালত ভোটের জন্য নতুন সময়সীমা ঠিক করে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ভোটের তারিখ পুননির্ধারণ করা হয় ২৬ জুন।