ঈদের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে ছুটি নিয়েছেন কেউ কেউ, আবার ঝক্কি এড়াতে ঈদের পর বাড়ি ও বিভিন্ন গন্তব্যে বেড়াতে গেছেন অনেকে। তাদের সবাই এখন ধরছেন ঢাকার পথ।
সে কারণে শনিবার ভোররাত থেকেই ঢাকার সদরঘাট, কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আসা লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে সদরঘাট নেমে ভোগান্তিতে পড়তে হওয়ার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে যথেষ্ট চাপ, এই চাপ এখনও চলছে।
”আশা করা যাচ্ছে এই চাপ আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কারণ আগামীকাল থেকে অফিস খোলা।”
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা কালনী এক্সপ্রেসে শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ কামরুজ্জামান।
কালনী ট্রেনে যাত্রীদের ‘প্রচণ্ড ভিড় ছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশেষ করে ভৈরব বাজার থেকে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী উঠেছিল। যদিও ভৈরব বাজারে এই ট্রেন দাঁড়ানোর কথা ছিল না।”
নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা উপকূল এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ওঠেন ব্যবসায়ী আমির হোসেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে তিনি বলেন, “এই ট্রেনে ব্যাপক ভিড় ছিল। মানুষের ভিড়ের কারণে বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। ঢাকায় পৌঁছতে ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা দেরিও করেছে।”
নোয়াখালী থেকে ইকোনো পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা ফিরেছেন মো. শাহজাহান।
যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “খুব ভোরে বাসে উঠেছিলাম, দুপুরে ঢাকা নেমেছি। বাসে যাত্রী ছিল ভরপুর।”
ঢাকায় ফিরতে ভোর থেকেই নোয়াখালীর বিভিন্ন টিকেট কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি বেশি ছিল বলে জানান তিনি।
তবে সোহাগ পরিবহনের বাস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বেনাপোলের যাত্রীও বহন করে থাকে বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ভৈরব থেকে ঢাকা আসা যাত্রীদের থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে নীলেশ বলেন, “ঈদ উপলক্ষে দুইশ টাকার ভাড়া তিনশ টাকা দেওয়া হচ্ছে, প্রতিবার ঈদের আগে-পরে বাস মালিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষেই এই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়।”
এদিকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা গেছে যাত্রীদের চাপ। শুক্রবার ভোর রাত থেকে যেসব লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়ছে তার সবগুলোতেই ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
বরিশাল থেকে কীর্তন খোলা-১০ লঞ্চে রাত সাড়ে ৩টায় সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছেন সামিরা আহমেদ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সামিরা আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ও আমার স্বামী দুইজনই ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ভিড়ের কারণে ঢাকায় ঈদ করে পরের দিন গ্রামের বাড়ি বরিশাল গিয়েছিলাম।
“রোববার থেকে অফিস করতে হবে বলে দুইজনই আবার ঢাকায় ফিরেছি। কিন্তু লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হয়েছে, যে কারণে লঞ্চের ছাদসহ কোথাও খালি জায়গা ছিল না।”
এদিকে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে যাত্রী সমাগম থাকলেও তা তুলনায় কম।
তবে ঢাকামুখী যাত্রী চাপের কারণে বহু ট্রেন পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে বলে ঢাকা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না জানালেন স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, “রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, একতা একপ্রেস, লালমনি ঈদ স্পেশাল যাত্রী চাপের কারণে আসতে দেরি হচ্ছে বলে এগুলো ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। কোনো কোনো ট্রেনের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হচ্ছে।”
সিল্ক সিটি ট্রেনে রাজশাহী যেতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন জীবন বীমা করপোরেশনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নান্নু।
তিনি বলেন, “ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিট, কিন্তু ট্রেনের কোনো খবর নেই। এ ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে সন্ধ্যার আগে এই ট্রেন ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।”