সেই ভুল আর করবে না গাজীপুরবাসী: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ‘৬০০ কোটি বরাদ্দ হলে মেয়রের অযোগ্যতার কারণে’ তার ব্যবহার হয়নি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, গাজীপুরবাসী এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ‘সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি’ করবে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2018, 06:44 PM
Updated : 22 June 2018, 06:44 PM

মন্ত্রীর নিজের এলাকা গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা এম এ মান্নান। নাশকতা ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলায় আদালতে অভিযুক্ত হওয়ায় কয়েক দফায় বরখাস্ত হন তিনি, কারাবাসও করতে হয়েছে তাকে।

আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এবার নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে আছেন ধানের শীষে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

এই নির্বান সামনে রেখে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচন ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শিরোনামে একটি সেমিনারে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, অনন্য বাংলাদেশ ও বাংলা বিচিত্রার যৌথ উদ্যোগে প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মন্ত্রী ছাড়াও গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, নির্বাচন পর্যবেক্ষক অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সমকালের উপ-সম্পাদক অজয় দাশ গুপ্তসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, “পাঁচ বছর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে গিয়েছিল। আজকে মিথ্যাচারের রাজনীতির কবর রচিত হয়েছে। বিএনপি মানুষের কাছে যেতে পারছে না। তারা উন্নয়নমুখী নয়। এজন্য একই ভুল গাজীপুরের মানুষ বারবার করবে না। আসন্ন নির্বাচনে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা নৌকা মার্কার পক্ষের প্রার্থীকেই ভোট দেবে।”

তিনি বলেন, “গাজীপুরে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। মেয়রের অযোগ্যতার কারণে সে টাকা ব্যবহার করা যায়নি।”

সেমিনারে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, “বিএনপির কাছে শুধু জনগণ নয়, আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো জননন্দিত নেতাও নিরাপদ ছিল না। তাকে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করা হয়েছিল। এরপরও বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচিত করে জনগণ টের পেয়েছে কী ভুল তারা করেছিল। গাজীপুরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল, এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে।”

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “গণমাধ্যমকে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে নির্বাচনী সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। যাচাই-বাছাই করে সঠিক খবর তুলে ধরতে হবে।”

ইসিকেও যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “গতবার গাজীপুরের নির্বাচনে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হয়েছিল। অথচ নির্বাচনী আইনে এটা নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা আমরা জানি না।”

নির্বাচনী প্রচারে আঞ্চলিকতার ব্যবহার আচরণবিধির লংঘন বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ।

তিনি বলেন, “এটা পশ্চাৎপদ মানসিকতা। ইসিকে এটা বন্ধ করতে হবে।”

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিল। সেদিন জয়দেবপুরবাসী বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছিল। তাই গাজীপুরবাসী মুক্তিযুদ্ধের পথে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তারা সিটি নির্বাচনে সেভাবেই রায় দেবে।”

সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, “বনাঞ্চল থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বন ও পরিবেশ বজায় রেখে উন্নয়ন করবেন এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।”

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, জগল্পুাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সংগঠক ম.  হামিদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল প্রমুখ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন বাংলা বিচিত্রার সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়। সঞ্চালনা করেন ডা. ফাইজা রাহেলা।