বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে যোগ দিবসের এই আয়োজনে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে হাজারো স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক যোগ দেন।
সরকার দেশজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে এনেছেন সেই প্রসঙ্গটিকে।
যোগ অভ্যাসে শরীর ও মন ভালো থাকবে- যুব সমাজকে এমন পরামর্শ দিয়ে কাদের বলেন, “আজকে তরুণ সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ সমাবেশে যোগ দিয়েছে। কর্মক্ষম সুস্থ জীবনের মূল মন্ত্র হল- এই ইয়োগা। এটা করলে তরুণরা নিজেদের আরো বেশি সৃজনশীল কর্মোদ্যমে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিজের হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে কাদের বলেন, ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও’ তিনি যোগচর্চা করতে পারেন না।
আয়োজকদের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এই যোগ সমাবেশে প্রায় ৫ হাজার নাগরিক যোগ দিয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকরাও যোগ দেন আয়োজনের এক পর্যায়ে।
“যোগচর্চা সুস্থ, সুন্দর জীবনের সহজ পন্থা- আমরা সেই বারতা নাগরিকদের দিতে চাই।”
ভারতীয় হাই কমিশনার জানান, ২০০০ সালে তারা যখন প্রথমবারের মতো এই আয়োজনটি করেছিলেন তাতে মাত্র ৭০০ জন অংশ নিয়েছিল। পরে ২০১৬ সালের দ্বিতীয় আসরে ১৫০০ জন, ২০১৭ সালে প্রায় ৫ হাজার নাগরিক যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে ভিয়েতনাম, ভাটিকান সিটি, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, প্যালেস্টাইন দূতাবাস ও জাতিসংঘ মিশনের কূটনীতিকরা যোগ দেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি, জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, দক্ষিণ এশীয় গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, মেহজাবীন চৌধুরী, আমান রেজা, সোহানা সাবা, কণ্ঠশিল্পী মেহরীন মাহমুদ যোগ দেন যোগ সমাবেশে।
যোগ সমাবেশে যোগ দিতে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে এসেছিলেন স্কুল শিক্ষিকা নূরুন্নাহার চৌধুরী।
গাজীপুর থেকে আসা ৬১ বছর বয়সী নারী শামসুন্নাহার চৌধুরী জানান, তারা ৭ বন্ধু মিলে এই প্রথমবারের মতো এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
ইয়োগা ফাউন্ডেশনের সদস্য ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ধীরে ধীরে যোগচর্চা বাড়ছে।
“যোগ চর্চার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ঘরে বসেই শরীর চর্চার সুযোগ থাকায় স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমি এসেছি দুই ছেলেকে নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই শরীর চর্চা করুক। এতে মনও চাঙ্গা থাকে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সঞ্জয় গাইন ও মিহির বাওয়ালি বলেন, শরীর ও মন চাঙ্গা রাখতে তারা প্রতিদিন ভোরে যোগ চর্চা করেন।
তিনি বলেন, “আমি হার্টের পেশেন্ট। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক আমি নিয়মিত যোগ চর্চা করছি। এতে বডি খুব ফেক্সিবল হয়। আগে তো খুব কাজ করতে পারতাম না। আমার দেখাদেখি আরো অনেকে যখন আগ্রহী হল, তখন সবাই মিলে একটি সংগঠন গড়ে তুললাম। এখন এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও যোগ দিচ্ছেন।”
মিরপুরের একটি বেসরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া তিন শিক্ষার্থী শামিমা, তানিয়া, সাদিয়া এসেছিলেন সমাবেশে।
শামিমা বলেন, “শরীর চর্চার বিষয়টি আসলে আমরা পাঠ্যপুস্তকেই পড়ি। এবার যখন এই সমাবেশের কথা জানলাম, তখন নতুন কিছু একদম চাক্ষুস দেখতে এখানে চলে এলাম। এখন নিজেরা দল বেধে ইয়োগা চর্চা করব। ফিজিক্যাল ফিটনেস পড়াশোনার জন্য ভীষণ দরকার।”
উৎকট আসন, গঙ্গাসন, বক্রাসন, বজ্রাসন, উষ্টাসন, ভুজঙ্গাসনসহ নানা আসনের কলাকৌশল দেখানোর পাশাপাশি তিনি বলে দেন, শারীরিক সমস্যাভেদে এই ব্যয়ামগুলোর চর্চা কিভাবে করতে হবে।
২০১৪ সালে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। পরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।