
সেই রকম ঈদ তো আর আসবে না: রাজীবের ছোট ভাই
কাজী নাফিয়া রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 16 Jun 2018 09:41 PM BdST Updated: 16 Jun 2018 10:41 PM BdST
বাবা-মার মৃত্যুর পর তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় রাজীব হোসেনকে ঘিরেই ছিল শিশু দুই ভাইয়ের আনন্দ-বেদনার জগত; সেই ভাইয়ের মৃত্যুতে এবার তাদের কাছে ঈদ এসেছে ভিন্নভাবে।
রাজীবের মৃত্যুর পর প্রথম ঈদের দিন শনিবার তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইয়ের সঙ্গে আমরা এক সাথে ঈদের নামাজ পড়তাম, খেতাম। সেই রকম ঈদ তো আর কখনও আসবে না। ভাইয়া তো আর ফিরে আসবে না।”
গত এপ্রিলে ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে এক হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিতুমীর কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র রাজীব।
তিনি থাকতেন মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে খালার বাসায়। যাত্রাবাড়ির মীরহাজারিবাগের তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট ভাই মেহেদী এবং ষষ্ঠ শ্রেণির আবদুল্লাহকে নিয়ে খালার বাসায়ই ঈদ করতেন তিনি।
বড় ভাই না থাকায় এবার মেহেদী ও আব্দুল্লাহর ঈদ কেটেছে পটুয়াখালীর বাউফলের দাশপাড়ায় নানা বাড়িতে।
তার ভাই মেহেদী টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বড় খালা, ছোট খালা ঈদের পাঞ্জাবি, জুতা কিনে দিয়েছে। প্রতিবার এক সাথে তিন ভাই ঈদ করতাম।
“এবার তো আর ভাইয়া নাই। সব সময় মনে পড়ছে ভাইয়ের কথা,” বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ঝরে তার কণ্ঠে।
রাজীবের অভাব খালা জাহানারা বেগমের পরিবারেও; তার স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়ের সঙ্গেও গড়ে উঠেছিল তার সখ্য।
জাহানারা বেগম শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি ঈদে ও আমাদের সাথে ঈদ করত। এবার ঈদ করব কি করে, বার বার আমার ছেলেটার কথা মনে পড়ছে। আমার ছেলে-মেয়ে মিলে প্রতি বছর ওরা কি আনন্দই না করত ঈদে!

রাজীব হোসেন
জাহানারা বেগমের ছেলে আসিফ জাহান অমি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
স্মৃতি আওড়ে জাহানারা বলেন, “ছোট থেকেই ওরা এক সাথে বড় হইছে। এক সাথে ঘুমাত, খেত, আমার ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেত।”
“গতকাল মার্কেটে জুতা কিনতে গেছিলাম, বার বার একই কথা বলছে আমার ছেলেটা- রাজীব ভাইয়া তো আর আসবে না,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
জাহানারার চার বছরের মেয়ের সঙ্গেও রাজীবের অনেক স্মৃতি।
তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমার মেয়ের জন্য চুড়ি, নেইল পলিশ, লিপস্টিক কিনে দিত। ওর তো বোন নাই, খুব আদর করত। আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরত। ভাই-বোনরা মিলে কলোনিতে খেলত। কী করে ভুলব এসব?
“ওকে তো খুন করা হইছে। গাড়ি থামালে ও বাঁচত। এমন একটা ছেলে হাজারে একটা হয়।”
রাজীবের ভাইদের দায়িত্ব অনন্ত জলিলকে দিতে চান না স্বজনরা
রাজীবের মৃত্যুর পর তার দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন অভিনেতা-ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। তবে তাতে সায় নেই পরিবারের।
রাজীবের মামা জাহিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন আগে উনার (অনন্ত জলিল) সঙ্গে মিট করেছিলাম। উনি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, রাজীবের ভাইদের মাদ্রাসায় লোকও পাঠিয়েছিলেন।
“মাঝে সব দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ওনাদের কাছে তাদের দিতে চাচ্ছি না আমরা। ছোটবেলা থেকে বড় হইছে আমাদের কাছে।"
তিনি বলেন, “অনন্ত জলিল হজে চলে গেছে, তো দায়িত্ব আমাদের কাছেই এসে পড়ছে। কাকে দায়িত্ব দিব, সে খেয়াল রাখবে কি রাখবে না। তাই আমাদের ছেলেদের আমরা কারও আয়ত্ত্বে দিতে চাচ্ছি না।”

গ্রামে ফিরে আগে রাজীবের কবর জিয়ারত করেন তার ছোট দুই ভাই
রাজীবদের বাবা-মার মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তাদের এই মামা বলেন, “আমাদের আসলে কপাল খারাপ। আবদুল্লাহর যখন ১০ মাস তখন ওর মা মারা গেছে। ওদের মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট বোন হ্যাপির সাথে রাজীবের বাবার বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু রাজীবের মা মারা যাওয়ার তিন বছর পরই ওর বাবাও মারা যায়।
“হ্যাপি ওদের তিন ভাইকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছে। রাজীব মারা যাওয়াতে বোনটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অসুস্থ হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, রাজীবকে ঘিরেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল এই পরিবারের।
“ও একটা চাকরি পেলে ওদের আলাদা বাসা নিয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তো সব শেষ।”
রাজীবকে নিয়ে হ্যাপিও থাকতেন মতিঝিলে ওই বোনের বাসায়।
জাহিদুল বলেন, “এই জুনেই রাজীবের গ্রাফিক্সের কাজ শেখা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে তো চলে গেল।”
রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পরে আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে তার বদলে হাই কোর্টকে একটি স্বাধীন কমিটি করে দিতে নির্দেশ দেয়। দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তা চিহ্নিত করে ওই কমিটির ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।
স্বাধীন কমিটি যে প্রতিবেদন দেবে, তা মূল্যায়ন করে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ‘পর্যাপ্ত’ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিতে হাই কোর্টকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
মেহেদী ও আবদুল্লাহ গ্রামে গিয়ে বাড়িতে না ঢুকে আগেই ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে যান জানিয়ে তাদের মামা জাহিদুল বলেন, “ওদের কষ্টটা বলে বোঝানো যাবে না।”
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
- মরদেহ শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিচ্ছে সিআইডি
- চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি: বঙ্গভবনে বিশেষ মোনাজাত
- চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি হয়ত এড়ানো যেত, মানছেন কাদের
- চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ড: ক্যানেস্তারাগুলো কাজ করেছে ‘বোমার মত’
- চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি: হাসপাতালের ৯ জনও ‘শঙ্কামুক্ত নয়’
- চকবাজারে আগুন: অবহেলাজনিত প্রাণনাশের মামলা
- মাদকবিরোধী অভিযানে চার জেলায় নিহত ৪
সর্বাধিক পঠিত
- চকবাজারের আগুনের সূত্রপাত কীভাবে
- ‘তুই বেঁচে আছিস!’
- টেস্ট দলে সৌম্য
- চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি: শেষ ঠিকানা আজিমপুর
- যেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল চকবাজারের আগুন
- অলরাউন্ড নৈপুণ্যে উজ্জ্বল নবি
- প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ম্যাচ মিরপুরে
- নরককুণ্ডের ক্ষেত্র যেন ‘তৈরি হয়েই ছিল’
- চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ড: ক্যানেস্তারাগুলো কাজ করেছে ‘বোমার মত’
- বিশ্ব-রাজিথার দারুণ বোলিংয়ে আগ্রাসী ডি কক