এখন পর্যন্ত স্বস্তির যাত্রা বাসে

ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে কিছুটা যানজটের মুখে পড়লেও এখন পর্যন্ত অনেকটা স্বস্তি নিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন বাসের ঈদযাত্রীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2018, 10:00 AM
Updated : 13 June 2018, 10:00 AM

কয়েকদিন আগ থেকে বাস টার্মিনালগুলোতে মানুষের ঢল অন্য ঈদগুলোতে এবার পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। বুধবার রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর এলাকার বাস টার্মিনালগুলোতে ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

যাত্রীরা বলছেন, অগ্রিম টিকেটের যাত্রীরা ঠিক সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন তারা; বাড়তি টাকা গুণে পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিক টিকেটও।

উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলমুখী বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান, বুধবার দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কে বড় ধরনের কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। এই অবস্থা চালু থাকলে এবার ঈদ যাত্রা স্বস্তিরই হবে।

শবে কদরের ছুটির দিন বুধবার পরদিন একদিন অফিস খোলা। বৃহস্পতিবার দিন পার হলেই শুরু হবে তিন দিনের ঈদুল ফিতরের ছুটি।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এবার ঈদযাত্রায় সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিভিন্ন স্থানে সড়কে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার পাশাপাশি মেরামতকাজ দ্রুত শেষ করা হয়।

দুপুর সোয়া ১২টায় কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার থেকে বেলা ২টার টিকেট কেটে অপেক্ষা করছিলেন রংপুরের যাত্রী হারুনুর রশীদ; তাৎক্ষণিক টিকেট পেতে ৬০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা বেশি গুণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসিআই কনজ্যুমারসের এই কর্মী।

হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রিম টিকেট বিক্রির সময় বলেছিল ১৩ তারিখের টিকেট নাই। এখন কয়েক কাউন্টার ঘুরে এখানে এসে টিকেট পেলাম। বেশি দামে বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছিল।”

এখন পর্যন্ত রাস্তার পরিস্থিতি ভালো থাকার কথা তুলে ধরে ‘আনন্দ নিয়ে’ বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।

কল্যাণপুর থেকে বেলা ১টার শ্যামলী পরিবহনের বাস গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আধঘন্টা পর। সেই বাসের যাত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসনাত শাহীন।

ওই বাসের অপেক্ষায় থাকার সময় শিশুকন্যা শায়ানকে চিপস কিনে দিতে দোকানে গেলে কথা হয় তার সঙ্গে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে পরিবারের উদ্দেশ্যে রওনা করছেন শাহীন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাস কাউন্টারে চলে আসছে। আধ ঘন্টা দেরি হচ্ছে এটা তত দেরি নয়। দেখি রাস্তা পরিস্থিতি কেমন থাকে।”

এবারে ঘরমুখো মানুষের ভিড় অন্যবারের তুলনায় কম হওয়ার জন্য ‘আগে-ভাগে মানুষ বাড়ির পথ ধরাকে’ কারণ হিসাবে ধরছেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের ম্যানেজার একেএম রাইসুল আলম সবুজ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ৭ তারিখ থেকে আমাদের অগ্রিম টিকেটের যাত্রীরা যাচ্ছে। অনেক মানুষ আগেভাগে বাড়ি চলে গেছে। আজকেও তেমন ভিড় নাই। আগামীকাল বিকেলের দিকে এরচেয়ে কিছুটা বাড়তে পারে।”

রাস্তায় যানজটের মুখোমুখি না হওয়ায় ঠিক সময়ে ফিরতি গাড়ি ফিরেছে এবং সময়মত ছেড়ে গেছে বলে জানান সবুজ।

এদিকে যাত্রী কম হওয়ায় মনভার ছোট পরিবহন কোম্পানিগুলোর; তার মধ্যে একটি বরিশাল রুটের শাপলা ট্রান্সপোর্ট। পাটুরিয়া থেকে লঞ্চ পারাপারের পর অন্য প্রান্ত থেকে আরেক বাসে যাত্রীদের বাড়ি পাঠায় তারা।

গাবতলীতে শাপলা ট্রান্সপোর্টের কর্মী জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রী নাই। এত কম যাত্রী কখনো দেখি নাই। সামনে তো দুয়েক দিন আছে, দেখি কেমন হয়।”

এদিকে, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও পাটুরিয়া পর্যন্ত আমিনবাজার, সাভার ও নবীনগর এলাকার যানজট কিছুটা ভোগাচ্ছে বলে জানালেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের কর্মী শামসুজ্জামান স্বপন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রীদের চাহিদার কারণে ঢাকার অনেক লোকাল গাড়ি এখন ফেরিঘাটের দিকে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে; সে কারণে ওই রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় কিছুটা যানজট হচ্ছে। তবে এটা সহনীয়।”

বুধবার সকালে গাবতলীতে বাস কাউন্টার পরিদর্শনে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের। সেখানে কাউন্টার ব্যবস্থাপক ও যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায় তাকে।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সারা দেশের রাস্তার অবস্থা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক ভালো। আমি কথা দিয়েছি, কথা রেখেছি।”

কাদের বলেন, “সড়ক সম্পর্কে কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রেক্ষিতে আমি স্পেশাল কেয়ার নিয়েছি এবারের ঈদে। এবার আমি প্রস্তুতি গত কয়েকবারের চাইতে জোরদার করেছি।”