ঢাকার হারানো ঐতিহ্য মসলিন পেল জাতীয় জাদুঘর

নিয়মিত প্রদর্শনীর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে ঢাকার হারানো ঐতিহ্য মসলিন কাপড়ের একটি টুকরো হস্তান্তর করেছে দৃক পিকচার লাইব্রেরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2018, 08:10 PM
Updated : 10 June 2018, 08:10 PM

রোববার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মসলিন গবেষক ও দৃকের সিইও সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে মসলিন কাপড়টি জাতীয় জাদুঘরের পক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে মসলিন নিয়ে নিজেদের তৎপরতার কথা তুলে ধরে সাইফুল ইসলাম বলেন, “চার বছর আগে আমি একটা প্রজেক্ট সাজিয়ে ওনার (আসাদুজ্জামান নূর) অফিসে গিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, এটা আমরা করব।

“এই চার বছরে আমরা প্রকাশনা বের করেছি, উৎসব করেছি, তাঁতিদের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি করেছি। এক্ষেত্রে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আমাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।”

ব্রিটিশ শাসনামলে কলকারখানা থেকে সাশ্রয়ী কাপড় আসায় এক সময় হারিয়ে যায় দীর্ঘ সময় নিয়ে মসলিন তৈরির তাঁত ও সুতা। সেই সুতা ফিরিয়ে আনতে সরকার ২০১৬ সালে ১২৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়।

সাইফুল ইসলাম বলেন, “আগে আমরা মসলিন উৎসবের সময় ১২টি মসলিন ভারত থেকে ধার করে এনে দেড় মাস রেখেছিলাম। আবার ফেরত দিতে হয়েছে।

“কষ্ট লেগেছে ঢাকারই মসলিন আবার অন্য দেশে ফেরত দেওয়ায়। তাই ভেবেছি কীভাবে এখানেই মসলিন স্থায়ীভাবে রাখা যায়। সব সময়ই আমাদের দেশের মানুষজন দেখবে।”

ঢাকায় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর অন্যতম স্থান দৃক গ্যালারির চেয়ে জাদুঘরকেই মসলিন রাখার জন্য উপযুক্ত স্থান বিবেচনা করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি দৃকে ২০-২৫ জন দেখার চেয়ে জাদুঘরে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ দেখবে। নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি উৎসাহ পাবে। তাই আমরা এটা জাতীয় জাদুঘরকে দান করলাম।”

ভারতের জয়পুর থেকে আনা মসলিনের এই টুকরাটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “৩৬০ মিমি মসলিন এটা। বর্ডারে পিওর সিলভারের কাজ রয়েছে। আমি ৩০০ মসলিন কাপড় দেখেছি। কিন্তু এটা স্পেশাল। এ ধরনের একটি কাজ কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আছে।"

গবেষকদের মতে, আড়াইশ কাউন্টের চেয়ে মিহি সাদা সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত শত বছর আগে।

পুরো একটি মসলিন একটি ম্যাচের বাক্সে ভরতে পারার যে কথা প্রচলিত আছে সেটা ৮০০ কাউন্টের সুতায় বোনা, ২০১৬ সালে ‘মসলিন রিভাইভাল’ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানিয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম।

ইতিহাসের বইয়ে সর্বোচ্চ ১২০০ কাউন্টের সুতার মসলিনের কথা আছে এবং সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ ধরনের মসলিন ছিল বলে জানিয়েছিলেন এই গবেষক।

জাদুঘরের পক্ষে মসলিন গ্রহণের পর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “মসলিন তো আমাদেরই ঐতিহ্যের অংশ ছিল। মসলিন নিয়ে অনেক গল্প আমরা বইয়ে পড়েছি। এই মসলিন তৈরির কাজ কতই না
সূক্ষ্ণ
 কাজ ছিল।”

তিনি বলেন, “আমাদের শিল্পীরাই একমাত্র দক্ষতার সাথে তৈরি করতেন, পৃথিবীর আর কোথাও কেউ তৈরি করতে পারত না। যে তুলার থেকে এই মসলিন তৈরি হত সেই তুলাও একমাত্র আমাদের দেশে পাওয়া যেত। যত দূর জানি সেই তুলার বীজও এখন আর পাওয়া যায় না।”

রাজ পরিবারের মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে থাকা মসলিন শাড়ি বোনা হত কার্পাসের সুতায়। এজন্য এক সময় বৃহত্তর ঢাকার মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর সংলগ্ন অঞ্চলে হত ফুটি কার্পাসের চাষ। সেই সুতা তৈরি হত নদীতে নৌকায় বসে, উপযোগী আর্দ্র পরিবেশে।

জাতীয় জাদুঘরে মসলিন সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি এই কাজটুকু সঠিকভাবে করতে পারি তাহলে আমাদের ছিনতাই হয়ে যাওয়া মর্যাদাটুকু ফেরত পাব।

“বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের এই মসলিন তারা নিজেদের মতো করে মেশিনে তৈরি করে। মসলিন তৈরির প্রক্রিয়াটাও আমাদের থেকে ধার করে নেয়া।”

তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে এটিকে সুরক্ষিত রাখা। সেজন্য আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আমরা জাদুঘরে যা দেখাই তা আমাদের মোট সংগ্রহের মাত্র চার ভাগ।”

জাদুঘরের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তাহলে আমরা বড় পরিসরে এই মসলিনকে স্থান করে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসও প্রদর্শন করতে পারব।"

দর্শনার্থীরা ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে জাতীয় জাদুঘরের টেক্সটাইল গ্যালারিতে এই মসলিনটি দেখতে পাবেন।