পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু রোম সংবিধিতে সই করেছে, সেহেতু আইসিসির চিঠির জবাব দেওয়ার এক ধরনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের ছিল।
“আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যেসব তথ্য চেয়েছে, আমরা কেবল সেগুলোই তাদের দিয়েছি।”
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ এখনও মনে করে, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর নিউ ইয়র্কে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে দিকে ইংগিত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিষয়গুলো এখনও আলোচনায় আছে। আর আমরা এ বিষয়ে আন্তরিক।”
বিচারিক এখতিয়ার নিয়ে তার এই প্রশ্নের মূল কারণ হল- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এ আদালতের সদস্য হলেও মিয়ানামার তা নয়।
আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে ফাতোও বেনসুদার আশা করছেন।
তার ওই আবেদনের পর বাংলাদেশ সরকারের মতামত চেয়ে গত মাসে চিঠি দেয় আইসিসি। প্রি-ট্রায়াল চেম্বার-১ এর ওই চিঠিতে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তিনটি বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দিতে বলা হয়।
বিষয় তিনটি হল- ১. মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসা এবং তাদের উপস্থিতি ঘিরে সামগ্রিক পরিস্থিতি; ২. রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে আইসিসির বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার আছে কি না এবং ৩. প্রসিকিউটরের আবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য বিষয়ে যথাযথ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মতামত, যা ওই আবেদন বিবেচনায় চেম্বারকে সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশ আইসিসিতে মিয়ানমারের বিচারের পক্ষে মত দিয়েছে কি না- সেই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে শাহরিয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইসিসি যেসব তথ্য চেয়েছে, আর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা যা জানি, তার সবই আমরা তাদের জানিয়েছি “
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম মেনেই বাংলাদেশ সব কিছু করে।
সিরিয়া ও লিবিয়া আইসিসির সদস্য না হলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশে হেগের আদালতে ওই দুটি বিচার পরিচালনা করে।
প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে আইসিসিতে বিচারের পথ তৈরির চেষ্টা শুরুর পর ওই খবরে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল মিয়ানমার সরকার।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ দিলেও মিয়ানমার বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গত অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।