বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের প্রস্তুতি শুরু: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2018, 07:12 AM
Updated : 6 June 2018, 07:17 AM

জাতীয় সংসদে বুধবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা বলেছেন, “একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে ৫/৬ বছর লেগে যায়। সেই জন্য বঙ্গবন্ধু-২ আমরা তৈরি করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

“একটা থাকলে আরেকটি যেন চালু হয়ে যেতে পারে সেটা মাথায় রেখেই ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দ্বিতীয়টির টাইম শেষ হয়ে এলে আমরা বঙ্গবন্ধু-৩ এ যাবো। এভাবে পর্যায়ক্রমে আমাদের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাব।”

গত ১২ মে ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তার প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। যখন যে প্রযুক্তি আসবে সেটা যেন আমরা গবেষণা, ধারণ ও ব্যবহার করতে পারি সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। এখন স্যাটেলাইটের যুগ, আমরা এটি পাঠিয়েছি। দেখি নতুন কী যুগ আসে, আমরা সেদিকেও যাব। যখনই যেটা আধুনিক ও যুগোপযোগী হবে সেটাই আমরা চিন্তাভাবনা করব।”

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উত্‌ক্ষেপণের পর এটা নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ফজিলাতুন নেসা বাপ্পীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে দেশে বিদেশে সকল বাঙালি খুশিতে উদ্বেলিত। খুশিতে সকলের চোখে আনন্দ অশ্রু। আমরা খুশিতে চোখের পানি রাখতে পারিনি। কিন্তু যখন সব মানুষ যখন এত খুশি, বিএনপির কেন দুঃখ। পৃথিবীর বহুদেশ আমাদের বহু ‍পূর্বে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। আমরা কেন পারলাম না।”

স্যালেটাইটের মালিকানা নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “স্যাটেলাইটের মালিকানা অবশ্যই বাংলাদেশের। সরকার যেভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালিক হয় সেইভাবে বাংলাদেশ সরকারই এর মালিক। তবে এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যারা যতটুকু ভাড়া নেবে তারা ততটুকু মালিক হবে।”

এই স্যাটেলাইট উত্‌ক্ষেপণের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে, এই স্যাটেলাইটের মালিক দুজন। তবে তিনি তাদের নাম উল্লেখ করেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, “দুটি ব্যক্তি তো এর মালিক হতে পারে না। এ ধরনের মন্তব্য করাটাও লজ্জাজনক। এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২০টি। বাকি ২০টি আমরা সার্কভুক্ত দেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশের কাছে ভাড়া দিতে পারব। এখানে দুই ব্যক্তি মালিক কীভাবে হলো সেটা বুঝতে পারছি না। কোন মানুষের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে ওই ধরনের মন্তব্য করতে পারে না।

“স্যাটেলাইটের ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টেলিভিশন টু হোম) টেকনোলজি ব্যবহারের জন্য বোধ হয় দুইজন ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বিএনপি দুইজন মালিক বলতে সেটাকে বুঝছে কী না বোধগম্য নয়। এই ধরনের অর্বাচীনের মত কথা বলা, জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এর থেকে মানুষকে ভালোবাসে কী না। কাজেই এরা দেশ চালিয়েছে দেশের উন্নতি হবে কী করে? এরা চালালে দেশ ‍উন্নত হবে না।”

বিএনপির প্রযুক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, “তাদের চিন্তাভাবনা এত সংকীর্ণ যে এই অঞ্চলে যখন সাবমেরিন কেবল আসে তখন বিনা পয়সায় দেওয়া হলেও বিএনপি সরকার তথ্য পাচার হবে বলে সেটি নিল না। এই কথা বলে আমাদেরকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। জানি না বিএনপির কাছে কী এমন গোপন তথ্য থাকে যে কুক্ষিগত রাখতে চায়।”

তিনি বলেন, “সাগরের তল দেশ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের মর্যাদাকে উন্নত করেছি। অগ্রযাত্রা যেন অব্যহত থাকে এজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।”

স্যাটেলাইটের সুবিধা পাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্যাটেলাইট ইতোমধ্যে তার কক্ষপথে পৌঁছে গেছে। সিগনাল দিতে শুরু করেছে। একবার যখন কাজ শুরু করে দেবে তখন কোনো সমস্যা হবে না। কোনো সন্দেহ করার কিছু নেই। এটা নিয়ে কোন দুঃচিন্তার দরকার নেই। আর এটুকু বলবো, না বলা কথাটি রবে না গোপনে।”