‘এমন মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়’

মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষের ‘সমর্থন থাকলেও’ কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানিকে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2018, 05:05 PM
Updated : 2 June 2018, 07:50 PM

শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন, যা অভিহিত করা হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বলে।

“গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এমন মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানে প্রদত্ত জীবনের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া যায় না।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের পাঠানো ওই বিবৃতিতে সই করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, লেখক-অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, কবি নির্মলেন্দু গুণ, লেখক-প্রকাশক মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত মাসের মাঝামাঝিতে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এরপর প্রতিরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

মাদকবিরোধী অভিযানের দুই সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরাও। মাদকের উৎস বন্ধ না করে এভাবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ মাধ্যমে মাদক নির্মূল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “সারা দেশে যে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে তার যৌক্তিকতা আমরা অনুধাবন করি। দেশে খুব কম পরিবার আছে যারা মাদকের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছেন। তাই সঙ্গত কারণে সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনও এই অভিযানে প্রত্যাশিত ছিল।”

তবে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন বিবৃতিদাতারা।

মাগুরায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয় মঙ্গলবার রাতে, যারা মাদক কারবারি বলে পুলিশের দাবি

এর মধ্যে সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যু আতঙ্ক তৈরি করছে বলে মনে করছে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, “টেকনাফে নিহত পৌর কমিশনার একরামের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার পূর্ব অভিযোগের কথা জানা যায়নি। তাকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পৌর মেয়র। তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাপূর্ব ফোনালাপ সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেছেন।

“এটা (ফোনালাপে যা উঠে এসেছে) কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে অকল্পনীয়। এ রকম একটি ঘটনাই সমগ্র অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও জনগণকে আতঙ্কিত করতে যথেষ্ট।”

যত দ্রুত সম্ভব ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সঠিক তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘ভয়ভীতি থেকে’ মানুষকে মুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।