রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরলে সবাইকে স্বাগত জানাব: মিয়ানমার

মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাং তুন বলেছেন, স্বেচ্ছায় ফিরতে চাইলে বাংলাদেশ থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গার সবাইকে ফেরত নিতে চায় তার দেশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2018, 01:50 PM
Updated : 2 June 2018, 03:11 PM

শনিবার সিঙ্গাপুরে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ ফ্রেমওয়ার্কের প্রয়োগ দরকার হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে।

২০০৫ সালে জাতিসংঘ সম্মেলনে ওই ‘আরটুপি’ ফ্রেমওয়ার্ক গৃহীত হয়, যেখানে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে নিজেদের জনগণকে রক্ষায় সম্মতি জানায় সদস্য দেশগুলো। এই অঙ্গীকার রক্ষায় একে অপরকে উৎসাহ যোগানো ও সহযোগিতার সমন্বিত দায়িত্ববোধের কথাও বলা হয় ফ্রেমওয়ার্কে। 

জবাবে থাং তুন বলেন, “আপনারা যদি তাদের ইচ্ছার ভিত্তিতে সাত লাখকে পাঠাতে পারেন, আমরা তাদের গ্রহণ করতে রাজি।”

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চার লাখের মতো মানুষ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। এর মধ্যে গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে আরও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

রাখাইনের মংডু এলাকার রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন জ্বলার এই দৃশ্য গত বছর ১১ সেপ্টেম্বরের। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে রোহিঙ্গা বসতিতে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহতার বিবরণ উঠে এসেছে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বয়ানে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “এটাকে কি জাতিগত নিধন বলা যায়?

“সেখানে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তাই এটা যুদ্ধাপরাধ নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ, এটা বিবেচনায় আসতে পারে। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট প্রমাণ দরকার। এসব গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া উচিত এবং যেনতেনভাবে এগুলো বলা ঠিক নয়।”

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্র সই করে বাংলাদেশ। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর এই দশ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য শাস্তি পেয়েছেন মিয়ানমারের ৭ সৈন্য: ছবি-রয়টার্স

এরপর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হলেও এখনও কেউ রাখাইনে ফিরতে পারেনি।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা স্মারকে সইয়ের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।

সমঝোতা স্মারক সই হলে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা রাখাইনে রোহিঙ্গা বসতিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, যা এতদিন বন্ধ ছিল।

রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের ভূমিতে ফিরতে পারে এবং প্রত্যাবাসন যাতে স্থায়ী হয় তার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তার বিষয়ে একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করা হবে এই সমঝোতা স্মারকের আওতায়।

এতে রাখাইনে সহিংসতায় ‘মানবাধিকার লংঘনসহ’ অন্যান্য অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

পরে ওই দিনই মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে ছুটতে ছুটতে বাংলাদেশে আসেন রোহিঙ্গারা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

রাখাইনের ঘটনা নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে তা ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন মিয়ানমারের নিরাপত্তা উদেষ্টা থাং তুন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার এটা অস্বীকার করে না যে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে যা প্রকাশিত হচ্ছে তা মানবিক সংকট। রাখাইনে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোগান্তিও অস্বীকার করা হয় না।

“সেখানে বৌদ্ধ রাখাইন, হিন্দু ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীও কম ভোগান্তির শিকার হয়নি।”

তিনি বলেন, তদন্তে সেনা সদস্যদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর-