সড়কের ঝক্কি এড়াতে ভিড় ট্রেনের কাউন্টারে

সড়কপথে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে যানজটের দুর্ভোগের শঙ্কায় ট্রেনকে পছন্দ করছে মানুষ, সেই কারণে আগাম টিকেটের ভিড় বেড়েছে কমলাপুর রেল স্টেশনে।

ওবায়দুর মাসুম নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2018, 06:37 AM
Updated : 2 June 2018, 06:37 AM

শুক্রবার অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন কমলাপুরে মোটামুটি ভিড় থাকলেও শনিবার ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট নিতে অনেকে আগের রাত থেকে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন।

যাত্রীরা বলছেন, ভাঙাচোরা রাস্তা, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ঈদ যাত্রায় ট্রেনকেই বেছে নিচ্ছেন তারা।

শনিবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, অগ্রিম টিকেটের সবগুলো কাউন্টারের সামনেই ভিড়। তবে বেশি ভিড় ছিল উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকেটের কাউন্টারে।

রাত ১১টা থেকে স্টেশনে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র মেসবাহুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯টার সময়ও টিকেট কাউন্টারের মুখে পৌঁছতে পারেননি। সিরাজগঞ্জ যেতে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনবেন তিনি।

মেসবাহুল বলেন, “আমাদের ওইদিকে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। গাজীপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেইনের কাজ হচ্ছে। এজন্য রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় যানজট হয়। এছাড়া কোনাবাড়ি, গাজীপুর চৌরাস্তা, চন্দ্রা এলাকায় ঈদের আগে কোনো কারণ ছাড়াই যানজট থাকে। এসব এড়াতেই ট্রেনে চলে যাই।”

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেইনের কাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের দিকে ট্রেনের উপর চাপ কমবে বলে মনে করেন মীর হোসেন। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য সেহরির আগে কমলাপুর আসেন তিনি।

“আমাদের ওই দিকের সড়কে অনেক যানজট থাকে। দুর্ভোগ এড়াতে ট্রেনে যাই। তবে ফোর লেইনের কাজ শেষ হলে ওই দিকে ট্রেনের উপর চাপ কমবে। তখন অনেকেই বাসে চলে যাবে।”

কুষ্টিয়ার পোড়াদহ যেতে ভোর ৪টার দিকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের কাউন্টারের সামনে আসেন ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান। তিনি জানান, যানজট এড়াতে ট্রেনে যাবেন তিনি।

“যদি বঙ্গবন্ধু সেতু, পাকশী হয়ে যাই, তাহলে যানজটে পড়তে হয়। আবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে গেলে রাজবাড়ীর দিকে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। এজন্য ট্রেনেই চলে যাই।

“এখানে দাঁড়িয়ে টিকেট কেনাটাই যা কষ্টের। বাকিটা আরামে যাওয়া যায়। সড়কপথের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্র সামিউল ইসলাম যাবেন সিরাজগঞ্জ। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য সেহরির সময় কাউন্টারে আসেন তিনি। লাইনে তার সিরিয়াল নম্বর ১১১। বেলা সাড়ে ১০টার সময়ও কাউন্টারে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।

“আমার আগে আরও অনেকে ছিল। তারপরও আশা করছি টিকেট পাব। চাইলে বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু সড়কে যে যানজট থাকে, বাসে যেতে ইচ্ছে করে না।”

টিকেট প্রত্যাশীদের চাপ আছে চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনের কাউন্টারের সামনেও। সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনের হলেও ভোগান্তি কমেনি।

“ওই রাস্তাটুকু যাওয়ার কথা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায়। কিন্তু এখনই বিভিন্ন সময় ১৮-১৯ ঘণ্টা লেগে যায়। ঈদের সময় তো অবস্থা ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে নিরাপদে বাড়ি যেতে চাই। এজন্য ট্রেনের টিকেট কিনতে এলাম।”

দিনদিন ট্রেনের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ বাড়ছে, এজন্য ট্রেনের সংখ্যা এবং সেবা বাড়ানোর দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সিলেটের পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মাহবুব হোসেন।

“মানুষের কাছে ট্রেনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।  এটা ধরে রাখা দরকার। এজন্য ট্রেনের কোচ, ইঞ্জিন বাড়ানো দরকার। সেইসঙ্গে সেবার মান বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।”

ট্রেনে প্রতিবছরই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, এ কারণে কাউন্টার সংখ্যাও বাড়াতে হচ্ছে।

“গতবার আমাদের কাউন্টার ছিল ২৩টা। এর আগের বছর ছিল ২০টি। এবার আমরা এখানে ২৬টি কাউন্টার করেছি। এছাড়া ট্রেনের টিকেটের সংখ্যাও বেড়েছে গতবারের চেয়ে।”

রেলের প্রতি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, রেলের উন্নয়ন চলমান। আওয়ামীলীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে রেলের আরও উন্নয়ন হবে।

“আমাদের সরকারের সময়ে ট্রেনে অনেক উন্নতি এবং অগ্রগতি হয়েছে। আমরা প্রতিবছরই ট্রেনের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। নতুন নতুন লাইন হয়েছে। নতুন ইঞ্জিন-বগি এনেছি। এজন্য ট্রেনের টিকেটের সংখ্যাও বেড়েছে। এবারও আমরা গতবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার বেশি টিকেট ছেড়েছি ঈদ উপলক্ষে।”

শনিবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরের টিকেট কাউন্টারগুলো থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। শনিবার দেওয়া হচ্ছে ১১ জুনের টিকেট।

শনিবার মোটামুটি গোলযোগ ছাড়াই টিকেট বিক্রি চলছিল। তবে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে নারীদের দুটি কাউন্টারের একটি বন্ধ করে দেন রেলওয়ে পুলিশের একজন পরিদর্শক। দুটি কাউন্টারের টিকেট প্রত্যাশীদের এক লাইনে আনতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

এ সময় নারীরা হট্টগোল শুরু করেন। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারগুলোয় টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় কমতে শুরু করে। বেলা ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট এবং চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনের টিকেট কাউন্টার পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়।