‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জোসেফ এখন মুক্ত

যাবজ্জীবন সাজার আসামি নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2018, 10:19 AM
Updated : 9 July 2018, 07:59 AM

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার আদেশ পাওয়ার পর ওইদিনই আমরা উনাকে ছেড়ে দিয়েছি।”

দুই দশক কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়ে জোসেফ ইতোমধ্যে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে জোসেফের পরিবারের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদের নামও রয়েছে পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। হারিস বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়।

নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু। আর তাদের বড় ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমদ এক সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক ছিলেন।

বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদের ছোট ছেলে হলেন জোসেফ।

ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত।  হাই কোর্ট ওই রায় বহাল রাখলেও ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

নিহত মোস্তফা ভাই হাবিবুর রহমান মিজান বর্তমানে মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড (৩২ নম্বর) কাউন্সিলর। তিনি মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক।

জোসেফ ২০ বছর আগে যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তার নামে তখন ঢাকার বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা ছিল। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলা ছাড়া বাকিগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছিল আগেই।

ওই মামলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে জোসেফ তিন দিন আগে মুক্তি পেলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর।

সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন মন্ত্রী; সেখানেই তিনি জোসেফের বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখুন তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। কারাভোগের পর ডিউ প্রসেস এ- যে প্রসেস এর মাধ্যমে আবেদন করা হয়, সে আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে।”

মুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “তিনি আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ। তার এক কিংবা দেড় বছর বাকি ছিল সাজা ভোগের। সেটার জন্য তিনি মারসি পিটশন করেছিলেন। খুব সম্ভবত মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাকে অনুমোদন করেছেন।

“তার কিছু অর্থদণ্ডও ছিল। সেগুলো আদায় সাপেক্ষে তাকে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করার পারমিশন দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি - এটুকু আমি জানি, এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জোসেফকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্বীকার করেন।

কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যাবজ্জীবন সাজার আসামির ২০ বছর কারাভোগ পার হলে কারা কর্তৃপক্ষ তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। সেই সঙ্গে তার পাওনা ছুটির তথ্যও দেওয়া হয়।

“এর মধ্যে জোসেফের পরিবারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার কথা বলে রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা চাওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেওয়ায় জোসেফকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”

সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদ নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসাবে। ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি।

জোসেফও এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানার নেতা হিসাবে দাবি করতেন। তবে সংগঠনের কোনো পদে তিনি ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

যাবজ্জীবন সাজায় কারাগারে থাকার মধ্যে জোসেফ জটিল কোনো রোগ না থাকার পরও টানা ২০ মাসের বেশি সময় হাসপাতালে কাটালে বিষয়টি গতবছর সংবাদ শিরোনাম হয়। এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফেরত নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।