দুই মামলায় খালেদার জামিন আটকে গেল

কুমিল্লায় নাশকতার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2018, 10:01 AM
Updated : 29 May 2018, 11:43 AM

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিএনপির চেয়ারপারসনের জামিনে স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলাটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

দুই মামলায় জামিন স্থগিতের পৃথক দুটি আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বৃহস্পতিবার হবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।

চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিতের আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে; আর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ।

সোমবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয়। তবে নড়াইলের মানহানির মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়েছে।

এই আদেশের দুই ঘণ্টার মধ্যে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত আবেদন শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন রাখেন।

সেই শুনানি নিয়েই হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে শুনানির জন্য আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান চেম্বার বিচারপতি।

চেম্বার আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে। সরকার চায় বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, কারাগারে রেখে তারা নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করবে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। সেই স্বপ্ন কোনো দিনও সার্থক হবে না সেটা আমরা বিশ্বাস করি।

এ বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না হলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না, এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। কারণ এই দেশে আদালত আছে। আদালত জামিন দিচ্ছে, আবার জামিন স্থগিতও করছে। মামলায় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং এই যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত আছে তার উপর নির্ভর করেই তাদের বক্তব্য দিতে হবে, যুক্তিতর্ক করতে হবে। মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে তাদের কোনো লাভ হবে না।’

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে দুটি মামলায় জামিন দিয়েছিল। এই জামিনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আপিল বিভাগে যে প্রভিশনাল লিভ পিটিশন দায়ের করেছিলাম, সেটির উপর আজ শুনানি হয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আগামী ৩১ তারিখে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন ধার‌্য করেছে। সে অবধি হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।’

হাই কোর্টে ঢাকার দুই মামলায় জামিন আদেশও বৃহস্পতিবার

জাতির মানহানি করা ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশও বৃহস্পতিবার।

মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ দুই মামলায় পৃথক দুই জামিন আবেদনে শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য এদিন ধার‌্য করেছে।

তবে সেদিন এ দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনার পর আদালত আদেশ দেবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের পক্ষে খন্দকার মাহবুব, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন শুনানি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করায় জাতির মানহানী করা ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকায় ২০১৬ সালে এ দুটি মামলা হয়েছিল।

পাঁচ বছরের দণ্ডাদেশ পাওয়া জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এ নিয়ে পাঁচ মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন চাইলেন খালেদা জিয়া। 

এর মধ্যে সোমবার সকালে কুমিল্লায় নাশকতার দুই মামলায় হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান খালেদা জিয়া। নড়াইলের মামলাটির জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে আদালত।