মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা শত ছাড়াল

মাদক নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2018, 03:44 AM
Updated : 29 May 2018, 04:44 AM

প্রশ্ন ওঠার মধ্যেই অব্যাহত এই অভিযানে সোমবার রাতে আরও ১২ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্য কুমিল্লায় দুজন, কুষ্টিয়ায় দুজন, যশোরে দুজন, ঢাকায় একজন, ময়মনসিংহে একজন, সাতক্ষীরায় একজন, বরগুনায় একজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে গত ১০ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৩ জন।

নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার কথা জানানো হলেও এখন গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর দিয়ে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলিতে মারা পড়ছেন তারা।

সমালোচনার মধ্যেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ যুদ্ধে নেমেছেন, নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুমিল্লা: ‘বন্দুকযুদ্ধে’ লিটন ওরফে কানা লিটন (৪৩) এবং বাতেন (৩৪) নামে দুই ‘মাদক কারবারি’র মৃত্যুর খবর দিয়েছে পুলিশ।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর এলাকায় গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের সামনে এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বলে মুরাদনগ থানার ওসি এ কে এম মঞ্জুর আলম জানিয়েছেন। 

ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, একটি কার্তুজ, একটি ছুরি ও ৪০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে পুলিশ।

মুরাদনগরের পৈয়াপাথর এলাকার আবদুস ছামাদের ছেলে লিটনের বিরুদ্ধে ৭টি মাদক মামলা এবং বাখরনগর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে বাতেনের বিরুদ্ধে ৮টি মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

ওসি বলেন, অভিযানের সময় এসআই মোজাম্মেল, এএসআই রোকন ও এএসআই মাসুদুর রহমান আহত হন।

মাদকবিরোধী অভিযানে গত এক সপ্তাহে কুমিল্লার কোতোয়ালিতে ২ জন, চৌদ্দগ্রামে ১জন, সদর দক্ষিণে ৩ জন, বুড়িচংয়ে ১ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ২ জন এবং দেবিদ্বারে ১ জন ও সর্বশেষ মুরাদনগরে ২জনসহ মোট ১২ জন নিহত হলেন।

যশোর: মাদক কারবারিদের ‘গোলাগুলিতে নিহত’ দুজনের লাশ উদ্ধারের খবর দিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার সেকেন্দারের ছেলে মানিক (২৭) এবং শহরতলীর মন্ডলগাতি গ্রামের জাহন আলীর ছেলে আহসান আলী (৫৬)।

কোতোয়ালি থানার ওসি আজমল হুদা জানান, রাত ৩টার দিকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।

মানিকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ৯টি ও আহসান আলীর বিরুদ্ধে  ১১টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়া: দৌলতপুরে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান টাইটেল (৪৮) নামে দুজন নিহত হয়েছেন।

রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বলে দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজগর আলী জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি শাটার গান, একটি পাইপ গান, ৩ রাউন্ড গুলি ও ২৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়  বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আজগরের দাবি, নিহত দুজনই ‘শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী’।

মুকাদ্দেস উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে; ফজলুর প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।

ঢাকা: দক্ষিণ খানের আশিয়ান সিটি মাঠে রাত সাড়ে ১২টার দিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান সুমন ওরফে খুকু সুমন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি।

ঢকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নূরুল আলম বলেন, সুমন ওই এলাকার একজন ‘চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা’ এবং তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের চারটি মামলা রয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ককটেল এবং এক হাজার ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সাতক্ষীরা: কলারোয়ার চুকনা এলাকায় আনিসুর রহমান আনিস (৪০) নামে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। তিনি পাকুড়িয়া গ্রামের সুরোত আলীর ছেলে।

কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানিয়েছেন, রাত সোয়া ২টায় দেয়াড়া ইউনিয়নের পিসলাপোলের
মাঠে মাদক ভাগাভাগি নিয়ে চোরাচালানিদের দুটি পক্ষের গোলাগুলির খবর আসে তার কাছে।

“খবর পেয়ে খোর্দ পুলিশ ক্যাম্পের এসআই সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে পৌঁছে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়।”

খোর্দ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, লাশের কাছ একটি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৭০টি ইয়াবা পাওয়া গেছে।

আনিসের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মামলা রয়েছে বলে ওসি জানান।

আনিসের স্ত্রী নাজমা বেগমের দাবি, তার স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে।

নাজমা বলেন, স্বামীকে তুলে নেওয়ার পর তিনি কলারোয়া থানা ও খোর্দ পুলিশ ক্যাম্পে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে আটকের কথা স্বীকার করেনি। রাতে তিনি কলারোয়া থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি।

এ বিষয়ে ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আখাউড়া পৌর এলাকার খালাজোড়া এলাকায় জনি মিয়া (৩০) নামে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতির অভিযোগে আটটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। জনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে।

আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, “রাতে ডাকাতির মালামাল ও মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে জনি ও তার সহযোগীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পৌঁছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির মরদেহ উদ্ধার করে।”

ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি কার্তুজ, ২টি ছোরা, ১টি চাপাতি উদ্ধারের কথাও জানান তিনি।

ময়মনসিংহ:  ভালুকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান মো. মিজান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে মাদকের কয়েকটিসহ মোট ৯টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, রাত পৌনে ২টার দিকে পাড়াগাঁও গ্রামে অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজান নিহত হন। থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ এবং এসআই শাহ আলমও এসময় আহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, দুটি গুলির খোসা ও একটি রামদা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

বরগুনা: বেতাগীতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ফিরোজ মৃধা নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বেতাগী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ফিরোজের বিরুদ্ধে নয়টি মাদক মামলা রয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

ভোররাতে কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালি এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বেতাগী থানার ওসি মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটার গান, রিভলভারের দুই রাউন্ড গুলি, বন্দুকের দুই রাউন্ড গুলি ও ২৪০টি ইয়াবা উদ্ধারে কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

ঠাকুরগাঁও: হরিপুর উপজেলার আটঘুড়িয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হারুন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীতলপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুল আজিজের ছেলে।

হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস বলেন, ভোর রাতে আটঘুড়িয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে ১১০ বোতল ফেনসিডিল, চারটি কার্তুজের খোসা ও চারটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ওসি বলেন, “হারুন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার নামে বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৭টি মামলা রয়েছে।”

মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ১১ লাশ  

মাদকবিরোধী অভিযান: নিহত আরও ১০ জন

মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ৯ জন গুলিতে নিহত

মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে নিহত আরও ১১ জন

বন্দুকযুদ্ধ’ চলছেই, এক রাতে নিহত ৯

কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন নিহত

‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, গুলিতে নিহত আরও ১২

মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত কাউন্সিলরসহ আরও ১১

মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ জেলায় আরও ১২ জন নিহত