বন্ধ হল মন্ত্রীর পছন্দে পিআরও নিয়োগের পথ

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিকে জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) নিয়োগের পথ বন্ধ করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2018, 04:06 PM
Updated : 27 May 2018, 04:55 PM

এখন থেকে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও গণযোগাযোগ-১ শাখা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় পিআরও নিয়োগ দেবে।

পিআরওদের নিয়োগ ও পদায়ন এবং তাদের কাজের ‘সমন্বয় ও জবাবদিহিতা রক্ষার স্বার্থে’ সম্প্রতি নতুন এই পরিপত্র জারির কথা জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তরা বলছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে বদলি ও নতুন কর্মকর্তা নিয়োগকে কেন্দ্র করে কিছু ‘জটিলতার’ পর পিআরও নিয়োগ ও পদায়নে নতুন এই অনুশাসন এসেছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, “বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ বেতারের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন বা সংযুক্তি দেওয়া হয়।

“পিআরও হিসেবে পদায়তকৃতদের প্রধান তথ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা থাকলেও বেতার থেকে পিআরও হিসেবে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রধান তথ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।”

বেতার থেকে নিয়োজিত পিআরওদের সমন্বয়কারী কে হবেন- সে বিষয়ে ইতোপূর্বে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তাদের কাজের সমন্বয় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানানো হয় পরিপত্রে।

নিয়োগ ও পদায়নে ওই অস্পষ্টতা দূর করতে ছয় দফা অনুশাসন দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

# এখন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থায় জনসংযোগ কর্মকর্তা সংযুক্তিকরণ, পদায়ন ও প্রত্যাহারের বিষয়গুলো তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও গণযোগাযোগ-১ শাখা থেকে পরিচালিত হবে।

# কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা বা দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তার চাহিদা পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তথ্য অধিদপ্তর থেকে উপযুক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হবে। ওই তালিকা থেকে মন্ত্রণালয় মনোনয়ন দিয়ে পিআরওর সংযুক্তি বা পদায়ন করবে।

# তথ্য অধিদপ্তর বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডার থেকে উপযুক্ত কর্মকর্তা না পেলে বেতার থেকে তথ্য (বেতার) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হবে। ওই তালিকা থেকে মনোনয়ন দিয়ে পিআরও হিসেবে সংযুক্তি বা পদায়ন করা হবে।

# প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সকল জনসংযোগ কর্মকর্তার রিপোর্টিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাদের কাজের সমন্বয় এবং কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। পিআরওদের সঙ্গে তিনি মাসে কমপক্ষে একটি সভা করবেন এবং কাজের মান ও গতিশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

# কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থায় জনসংযোগ কর্মকর্তার চাহিদা থাকলে সরাসরি কোনো ক্যাডারের এবং কোনো কর্মকর্তার নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা পদায়নের চাহিদা পাঠাবেন।

পরিপত্রে তথ্য (বেতার) ক্যাডারের কথা বলা হলেও বিসিএসে বেতারের জন্য আলাদা কোনো ক্যাডার নেই।

বিসিএস সাধারণ তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সহকারী পরিচালক, তথ্য কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তা ও সমমানের পদ, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) এবং সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

আর প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারে বিসিএস (তথ্য) কর্মকর্তাদের পদবী হয় সহকারী বেতার প্রকৌশলী। তবে এই পদে নিয়োগ পেতে পদার্থ বিজ্ঞানে ‘বিশেষ জ্ঞান’ থাকা বাধ্যতামূলক।

কেন এই পরিপত্র

চলতি বছরের শুরুতে মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন পিআরও নিয়োগ হয়।

সাধারণত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীদের পছন্দের ভিত্তিতে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পিআরও হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আসছিল তথ্য মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তারা জানান, অনেক সময় তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের প্রভাবশালীদের কাছে ধর্না দিয়ে আসছিলেন। 

মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর গত ২৮ মার্চ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পিআরও আবু নাছেরকে আগের পদ, অর্থাৎ বাংলাদেশ বেতারের সহকারী পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়।

এরপর গত ৮ মে তাকে বেতারের রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে বদলি করে সরকার; যদিও অর্জিত ছুটিতে থাকায় নাছের এখনও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।

অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযেগ প্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পান শহিদুল আলম মজুমদার। একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় এই রদবদল হয় বলে সে সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। তবে কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

মোস্তাফা জব্বার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পান শেফায়েত হোসেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তিনি ওই বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে যান।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পিআরও নিয়োগকে কেন্দ্র করে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর তদবিরের পর এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারির উদ্যোগ নেয় তথ্য মন্ত্রণালয়।

এ ধরনের জটিলতা এড়াতে নতুন করে এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।