রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রেললাইনের পাশের বসতিতে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ষাটোর্ধ্ব এক নারী বলেছেন, পুলিশের এক কর্মকর্তার নির্দেশে মাদক বিক্রেতারা সবাই এলাকা ছেড়ে গেছেন, তিনিও ব্যাগ গুছিয়েছিলেন।
Published : 27 May 2018, 08:15 PM
মাদকের খোঁজে কারওয়ান বাজার বস্তিতে পুলিশের হানা
গনকটুলিতে মাদকবিরোধী অভিযানে অর্ধশত গ্রেপ্তার
ওই বসতির সব ঘরেই মাদক বেচাকেনা হয় দাবি করে শুধু তাকে কেন ধরা হচ্ছে সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি। রোববার দুপুরে কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই এলাকা থেকে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তেজগাঁও থানা, তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল কারওয়ানবাজার এলাকায় মাদকবিরোধী এই অভিযান চালায়।
বেলা ৩টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের চারপাশ ঘিরে রেখে পুলিশ বিভিন্ন খুপড়ি ঘরে মাদকের খোঁজ করছে। কোনো নারী-পুরুষ ওই এলাকায় ঢুকতে বা বেরোতে চাইলে পুলিশের তল্লাশির মুখোমুখি হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে একজন নারী পুলিশ কনস্টেবল ষাটোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে আনেন। হাজেরা মমতাজ নামের ওই নারী বস্তিতে ‘হারুনের মা’ বলে পরিচিত বলে ওসি মাজহারুল জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “হারুনের মা কারওয়ানবাজারের সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী। তার এই বয়সেও প্রতিদিন দুইটা বিয়ার খেতে হয়।”
এরপর তাকে আটক করে থানায় নেওয়ার সময় হাজেরা মমতাজ ওসি মাজহারুল ইসলামকে বলেন, “স্যার, আপনি দুই দিন আগে আমাদের কারওয়ানবাজার ছেড়ে চলে যাইতে বলছিলেন। সবাই চইলা গেছে। আমি ব্যাগ রেডি করছি। এখনই এলাকা ছাইড়া চইলা যামু। আমারে আইজ নিয়েন না।”
ওসি মাজহারুল ইসলাম মাদক ব্যবসায়ীদের নাম জানতে চাইলে হাজেরা মমতাজ বলেন, “আমি নাম কমু না। নাম কইলে আমার পোলাগো ট্রেনের নিচে ফালায়ে মারব।”
এরপর ওসি বলেন, কারওয়ানবাজারে কোনো মাদক ব্যবসায়ী থাকতে পারবে না। এখানে অবৈধ কিছু চলবে না।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পুলিশ সদস্যদের রেললাইনের বিভিন্ন কাচা ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।
তেজগাঁও থানার শবনম নামের এক নারী পুলিশ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত পরশুদিনও পুলিশ এখানে এসেছিল।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আবদুর রশীদকে অভিযানে তৎপর দেখা যায়। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
কারওয়ানবাজারে পুলিশের এই অভিযান নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
রেললাইন থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে ইউসুফ কনফেকশনারীর মালিক মো. শামীম বলেন, “পুলিশ আসার আগেই বাজারের সবাই কম বেশি বুঝতে পেরেছিল পুলিশ আসবে। এজন্য অনেকেই পুলিশ আসছে দেখে চলে গিয়েছে।”
জানতে চাইলে পুলিশের তেঁজগাও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযানের খবর আগেই প্রকাশ পেয়েছে এই ধরনের অভিযোগ সত্য না। যারা এসব কথা বলছে তারা অপপ্রচার করছে।”
কারওয়ানবাজারে এই অভিযানের আগে সকালে হাজারীবাগে গণকটুলি বস্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ওই অভিযানে অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানিয়েছেন।
অভিযানে ৩৬৩টি ইয়াবা, ২৯ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা এবং দেড় হাজার লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়।
কারওয়ান বাজার ও হাজারীবাগে অভিযানে ৮ নারীসহ ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানিয়েছেন।
আগের দিন শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে রাতে মহাখালীর কড়াইল বস্তি ও কমলাপুরের টিটিপাড়া বস্তিতে অভিযান চালিয়ে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।