পানি না পেলে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে কাজ হবে না: ফখরুল

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাশ কাটিয়ে ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টি জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2018, 03:11 PM
Updated : 26 May 2018, 03:56 PM

পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব।

শনিবার বিকালে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সেখানে প্রধানমন্ত্রী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলেছেন। এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের জন্য তাহলে কি আমরা আমাদের যে বাঁচা-মরার সমস্যা, আমাদের যে পানির সদস্যা, ১৫৮টি নদীর হিস্যা প্রয়োজন-সেসব সমস্যা কী আমরা ভুলে যাব?

“আমাদের কোটি কোটি মানুষ এই তিস্তা নদীর অববাহিকায় অথবা অন্যান্য নদী যা ভারত থেকে বয়ে আসছে তার অববাহিকায় যারা বাস করে তারা কি সুরাহা পাবে না, তাদের জীবন-জীবিকা কি বন্ধ হয়ে যাবে?”

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীও সেখানে ছিলেন।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে মন্তব্য করেন। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এখনও যেসব সমস্যা আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমেই তার সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

মির্জা ফখরুল বলছেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তার দলও চায়।

“তবে সেই সম্পর্ক তো হতে হবে সম্পূর্ণ পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে। আমার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের স্বার্থ পূরণ করা তো আমার কাজ নয়।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজকে আপনি দাবি করেন, আপনি এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। জনপ্রিয় হলে আমার দেশের সমস্যার কথা না বলে আপনি শুধু সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করবেন-এটা তো এদেশের মানুষ মেনে নিতে পারবে না।”

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

এরপর দিল্লিতে ক্ষমতার পালাবদলে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসার পর কয়েক দশকের সীমান্ত সমস্যার সুরাহা হলেও তিস্তা চুক্তির জট আর খোলেনি।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “১০ বছর ধরে শুনে আসছি- আওয়ামী লীগ এসে গেছে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়ে যাবে। আজ পর্যন্ত হয়নি। সীমান্তে আমার লোককে পাখির মতো হত্যা করা হয়। সেই ব্যাপারটি এখনও বন্ধ করতে পারেননি।”

তিস্তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতের সঙ্গে আলোচনা জরুরি বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রথমেই চীন ও ভারতের সাথে কথা বলা উচিৎ ছিল।আমি বলব, এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। এটাই সবাই চায়। আমরা আশা করব, এদেশের মানুষ আশা করে, তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে যখন দেশের বাইরে দেশের প্রতিনিধি হয়ে যান।”

মতিঝিলের হোটেল পূর্বানীতে রাজনীতিবিদদের সম্মানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) এই ইফতার মাহফিলে দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকার ‘একতরফা’ নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই যে সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ওপর বসে আছে, তাকে সরাতে হলে আজকে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে শুধু ২০ দলের মধ্যে নয়, অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে নিয়ে-একটি স্বার্থে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

“সেই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।”

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন।

ইফতারে অন্যদের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এমএম আমিনুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারোয়ার, আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মজিবুর রহমান, বিজেপির আবদুল মতিন সাউদ, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার আসাদুর রহমান খান, লেবার পার্টির দুই অংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, মাহমুদ খান, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মো. কামাল ভুঁইয়া, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির মনজুর হোসেন ঈসা, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের মিজানুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, খালেদা ইয়াসমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহম জহির হোসেন হাকিম, এম অহিদুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম, বেলাল আহমেদ, মাওলানা  হারুন অর রশীদ, সালমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদউদ্দিন আহম্মেদসহ নেতা-কর্মীরা ইফতারে অংশ নেন।