বঙ্গবন্ধু-১ এর ঠিকানা হয়েছে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমার একটি অরবিটাল স্লটে। মস্কো-ভিত্তিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের কাছ থেকে ৪৫ বছরের জন্য ওই স্লট ভাড়া নিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১০০ ডিগ্রি ও ৭৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে দুটো অরবিটাল স্লটের বরাদ্দ চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছে আবেদন করেছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, এর একটিকে বঙ্গবন্ধু-২ এর জন্য ভাবছেন তারা।
“আমরা আইটিইউতে আবেদন করে রেখেছি। এর মধ্যে ১০০ ডিগ্রিতে ভারতের দাবি আছে। ৭৪ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটটি এখনও খালি আছে। তবে আমরা দুটোর জন্যই চেষ্টা চালিয়া যাচ্ছি।”
যেহেতু গ্রাউন্ড স্টেশন করা হয়ে গেছে, ফলে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের জন্য খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মন্ত্রী বলেন, “৭৪ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটটি পেলে বঙ্গবন্ধু-২ হয়ত সেখানেই বসানো হতে পারে।”
স্যাটেলাইটের জন্য কক্ষপথ বরাদ্দের প্রক্রিয়া নির্ধারণে আইটিইউ হচ্ছে সর্বোচ্চ সংস্থা। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আইটিইউয়ের বার্ষিক সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ চার বছরের জন্য এ সংস্থার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়।
এই সদস্যপদপ্রাপ্তি অরবিটাল স্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে বলে সরকারের কেউ কেউ সে সময় আশা প্রকাশ করলেও তা হয়নি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) শুরুতে ১০২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের একটি স্লটের জন্য আইটিইউয়ের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল, জাপানসহ ২০টি দেশ ওই স্লটের জন্য আগেই আবেদন করে রাখায় এবং বাংলাদেশের জন্য তারা ছাড় না দেওয়ায় বাংলাদেশকে বিকল্প ভাবতে হয়।
তখন সময়ক্ষেপণ এড়াতে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের হাতে থাকা ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের স্লটটি ইজারা নেয় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় সেই ইজারার চুক্তি করে বিটিআরসি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ইন্টারস্পুটনিকের কাছে এই অরবিটটি অ্যাভেইলেবল ছিল। এটাই আমরা পেয়েছি।”
একটি ‘সুইটেবল’ কক্ষপথের জন্য বিটিআরসি থেকে সে সময় প্রয়োজনীয় সব চেষ্টাই করা হয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১১৯.১ যদি না পেতাম, তাহলে হয়ত আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণই করতে পারতাম না।”
তিনি জানান,নিজস্ব অরবিটে পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে এখন সিগন্যাল পাচ্ছে বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। তবে ওই কৃত্রিম উপগ্রহটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর নিয়ন্ত্রণ করা হবে মূলত গাজীপুরে নির্মিত নতুন ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে। সেজন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও চলে এসেছেন।
পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষ হওয়ার পর স্যাটেলাইট পূর্ণ কার্যক্রমে যেতে সর্বোচ্চ তিন মাস লাগতে পারে বলে জানান মেসবাহুজ্জামান।
স্যাটেলাইটের বাজার মূল্যায়ন, বাজারজাতকরণ, বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে চুক্তি করেছিল বিটিআরসি। এ ধরনের কাজে কী পরিমাণ জনবল লাগতে পারে সে সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছিল এসপিআই।
মেসবাহুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন অপারেশনে ১০৫ জন জনবল নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে এসপিআই। একবারে সম্পূর্ণ জনবল নিয়োগ দেওয়া না গেলেও বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলে তারাই বাকি জনবল নিয়োগের বিষয়টি দেখবে।
“দীর্ঘদিন ধরে আমরা কাজটা করছি, নিশ্চয়ই একটা ভাল কোম্পানি হবে,” বলেন প্রকল্প পরিচালক।
আরও খবর: