শান্তিনিকেতনে এক মঞ্চে হাসিনা ও মোদী

শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।

রিয়াজুল বাশার শান্তিনিকেতন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2018, 05:32 AM
Updated : 25 May 2018, 12:12 PM

শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কলকাতার স্থানীয় সময় ৯টা ২৫ এ নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা।

সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে বীরভূমে শান্তিনিকেতনে পৌঁছালে বিশ্ব ভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক সবুজ কলি সেন তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এই সমাবর্তন ঘিরে বিশ্বভারতীকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি বিশ্বভারতীর আচার্য।

বিশ্বকবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা যোগ দিচ্ছেন ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে। সমাবর্তনস্থলে যাওয়ার আগে তিনি রবীন্দ্র চেয়ারে শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন।

 
 

ভারতের সরকারপ্রধান ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গভর্নর কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, বিভিন্ন দেশের পণ্ডিত ব্যক্তি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধি এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়েছেন এ সমাবর্তনে।

বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

সমাবর্তনের মঞ্চ সাজানো হয়েছে কাঠ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী কায়দায়। হস্তশিল্পের কারুকাজে রঙের ব্যবহারেও রয়েছে বৈচিত্র্য। 
 
মঞ্চে বসার জায়গা সাজানো হয়েছে বৈঠকী কেতায়। পুরো প্রক্রিয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়ে দেওয়া রীতিতেই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
 

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের পরণে রয়েছে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে হলুদ উত্তরীয়। আর ছাত্রীরা এসেছেন হলুদ পাড়ের সাদা শাড়ি পরে; তাদের কারও কারও গলায় আছে হলুদ উত্তরীয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পোশাকের ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার রঙ ধরে রাখার একটি চেষ্টা সবসময়ই থাকে।
আম্রকুঞ্জে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে মাটিতে মাদুর বিছিয়ে, তাদের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা নেই সেখানে।
ঐতিহ্য অনুযায়ী ডিগ্রিপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছাতিম পাতায় সার্টিফিকেট দেওয়া হবে এ সমাবর্তনে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের ফলক উন্মোচন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পরে দুই নেতার বৈঠক হওয়ারও কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত এই ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনের প্রেক্ষাগৃহ, যা বিশ্বভারতীতে থাকা প্রেক্ষাগৃহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক সংগ্রহশালার পাশাপাশি ভবনটিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগারও তৈরি করা হয়েছে।

ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ-শত জন্মবার্ষিকীর উদযাপন ঘিরে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান থেকে বিকেলে কলকতায় ফিরে হোটেল তাজ বেঙ্গলে উঠবেন শেখ হাসিনা। ভারত সফরের সময় এই হোটেলেই অবস্থান করবেন তিনি।

বিকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করার পর সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতার ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

 

সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে আসানসোল যাবেন শেখ হাসিনা। সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে।

কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বক্তৃতা দেবেন।

আসানসোল থেকে কলকতা ফিরে বিকালে নেতাজী যাদুঘর পরিদর্শন করার পর শনিবার রাতে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মসিউর রহমান, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান খান, নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।

এছাড়া ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা দীপু মনি ও শেখ হেলাল উদ্দিন, অসীম কুমার উকিল, এসএম কামাল, শামসুন্নাহার চাঁপা, পারভিন জামান কল্পনা, যুবলীগ নেতা অপু উকিল রয়েছেন শান্তি নিকেতনের এই সফরে।