টিআর-কাবিখায় অনিয়ম রোধে দুদকের ১০ সুপারিশ

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে টিআর, কাবিখা, কাবিটা কর্মসূচিতে অনিয়ম রোধে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2018, 06:20 PM
Updated : 24 May 2018, 06:20 PM

কমিশনের সচিব মো. শামসুল আরেফিন গত ২১ মে এক চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং দুদক চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকেও ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো দুদক সচিবের চিঠির একটি অনুলিপি হাতে পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

কাবিখা কর্মসূচির আওতায় শরীয়তপুর সদরের রুদ্রকর ইউনিয়নে নির্মিত একটি মাটির রাস্তা

চিঠিতে বলা হয়েছে, “দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাবিখা, টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের নানা অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।

“এছাড়া পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে নানা ধরনের অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুদক পরিচালিত গণশুনানিকালেও এ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়।”

এসব অভিযোগ ও কমিশনের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধে দুদক ১০ দফা সুপারিশ করে।

# নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তেমন পর্যাপ্ত সময় দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর অর্থ ছাড় করবে। অর্থবছর শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থ ছাড় করা হলে আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কাজেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড় করা প্রয়োজন।

# বিশেষ প্রকল্পে অর্থ বা সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকল্প প্রস্তাব সরেজমিন যাচাই করা যেতে পারে এবং প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না- তাও নির্ধারণ করা যেতে পারে।

# দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকেন্দ্রীক সক্রিয় দালাল চক্র ও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের এজেন্টদের নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে।

# বিশেষ কোনো প্রকল্প বারাদ্দের কোনো প্রস্তাব প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সতর্কতার সাথে করতে হবে। জেলা প্রশাসকরা এরূপ বিশেষ প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের ক্ষেত্রে শতভাগ সরেজমিন যাচাই করে প্রেরণ করবেন। এর ফলে ভুয়া প্রকল্পের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।

# বিশেষ ও সাধারণ বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কি না- তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শতভাগ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। এহেন কর্মকাণ্ড ভুয়া কমিটি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

# নীতিমালা মোতাবেক প্রকল্প এলাকায় একাধিক সাইনবোর্ড সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন জায়গা স্থাপন নিশ্চিত করবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। সামাজিক অডিট কার্যক্রম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

# প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হলে এবং এর ফলে কোনো প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে সকলে সমভাবে দায়ী হবেন মর্মে পরিপত্র জারি করা যেতে পারে।

# অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়িত কাবিখা প্রকল্পের অর্থ সরাসরি পিআইসির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

# দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোনো প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ না দেওয়া যেতে পারে।

# উপজেলায় অন্তর্গত সকল রাস্তা, খাল, নালা; সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যাতে সংশ্লিষ্ট রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নকারী সংস্থার নাম ও উন্নয়নের সাল আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কোন বছরে কী সংস্কার করা হল তা পূর্বের বছরের সংস্কার কাজের সাথে তুলনা করে একটি তুলনামূলক বিবরণী পেশ করতে হবে।

টিআর-কাবিখাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’ হয়ে থাকে মন্তব্য করে এজন্য কর্মসূচিগুলোর বিদ্যমান ‘ক্রটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ’ নীতিমালাকে এর আগে দায়ী করে দুদক।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দুর্নীতি বন্ধে গত এপ্রিলের শেষ দিকে দুদক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় টিআর, কাবিখা নীতিমালায় অনিয়ম-দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।