কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে এসে বৃহস্পতিবার ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, শরণার্থী শিশুদের দায়িত্ব পুরো পৃথিবীকে নিতে হবে। কারণ তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই।
“হৃদয় খুলে দিন। আপনারা মনে সহমর্মিতা আনুন। আমাদের নিজেদের শিশুদের মতো এই শিশুদের দেখুন।”
জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে গত চার দিনে অনিশ্চিত জীবনে থাকা শিশুদের সঙ্গে খেলা, খুনসুটিতে মেতে ছিলেন বলিউড-হলিউডের এই তারকা।
তিনি বলেন, একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ সব শিশুদের প্রাপ্য। পৃথিবীতে নিজ কর্মের অবদান রেখে যাওয়ার মতো সুযোগ পাওয়া সব শিশুর অধিকার। কিন্তু রোহিঙ্গা শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত।
“তাদের কিছুই নেই। খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, বর্ষায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এর মাঝেও তারা হাসছে।”
আসছে বর্ষায় এই শরণার্থী শিশুদের সম্ভাব্য দুর্ভোগ নিয়েও উদ্বেগ ঝরে এই অভিনেত্রীর কণ্ঠে।
“আপনারা জানেন, বর্ষা চলে আসছে। বর্ষায় আমাদের এই অঞ্চলে কী ঘটে সেটা আপনারা সবাই জানেন।”
প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই শিশুদের জন্য কোনো সহযোগিতাই ক্ষুদ্র নয়। সেটা পরিমাণে যত কমই হোক না কেন।
গত বছরের অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে নিপীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে যে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তার ৬০ শতাংশেই শিশু।
এই শিশুদের জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ; তার অংশ হিসেবেই প্রিয়াঙ্কার বাংলাদেশে আসা।
তিনি বলেন, এই জীবনে যত জায়গায় গিয়েছেন, তার মধ্যে এটা তার জীবন বদলে দেওয়া যাত্রা।
“এই শিশুদের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তারা ডেকে আনেনি। এটার দায়ও তাদের নয়।”
নিজ ভূম ছেড়ে বাংলাদেশে এসে পাওয়া মানবিকতার স্পর্শ যে এই সব শিশুদের মনও ছুঁয়ে গেছে, তার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে ক্যাম্পে দেখা শিশুদের চিত্রকর্মের বিষয়বস্তুর প্রসঙ্গ টানেন প্রিয়াঙ্কা।
“আমি শিশুদের ছবি আঁকার খাতার পাতা উল্টে দেখেছি। গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে যখন তারা কক্সবাজারে এসেছে, তখন তাদের আঁকাআঁকির বিষয় ছিল, শিশুরা মাঠে ফুটবল খেলছে, আর হেলিকপ্টার থেকে তাদের দিকে বুলেট ছোড়া হচ্ছে। তাদের ঘরে রকেট লঞ্চার মারা হচ্ছে। যাতে তাদের মাথা, শরীরের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ৪-৬-৭ বছর বয়সী শিশুদের স্মৃতিতে (তাদের দেশের)এমন চিত্রই দেখা গেছে।”
৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু মনসুর আলীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শিশুটি এঁকেছে, তাদের খেলার মাঠে বোমা ফেলা হচ্ছে, তাদের দিকে বুলেট ছোড়া হচ্ছে।
“এখন সে আঁকছে বাংলাদেশ, রৌদ্রালোক, সবুজ গাছপালা, শিক্ষক প্রভৃতি। মাত্র ৬ মাসে এটা বদলে গেছে। কারণ তাদের প্রতি (বাংলাদেশে) মানবতা দেখানো হয়েছে।”
সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ভারতীয় এই অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, “এই মানবিকতা সারা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।”
উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি শরণার্থী ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছের রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেন প্রিয়াঙ্কা। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন তাদের বাস্তবতা, তাদের সঙ্কট। তারপর আসেন ঢাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে এসেই প্রিয়াঙ্কা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বাংলায় কেবল দুটি কথা বলতে পারেন, ‘তোমার নাম কী’ এবং ‘রসগোল্লা’।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সীমা সেন গুপ্ত, ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস চিফ জ্যঁ জ্যাক সিমনও বক্তব্য দেন।