কুমিল্লার এক মামলায় খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি শেষ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মামলাটিতে হাই কোর্টে বিএনপি চেয়ারারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2018, 01:04 PM
Updated : 24 May 2018, 01:06 PM

তবে আরও অন্তত দুটি মামলায় তার জামিনের আবেদন রয়েছে উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চটিতে, সেগুলোর শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেবে বলে ধারণা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা সেই মামলায় আপিল করে জামিন নিলেও বিচারাধীন কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তি মিলছে না।

মুক্তির পথ খুলতে তাই গত ২০ মে কুমিল্লার দুটি এবং নড়াইলের একটি মামলায় জামিনের আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।

তার মধ্যে চৌদ্দগ্রামে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মামলার বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে শুনানি শেষ করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রোববার নড়াইলের মানহানির মামলা এবং কুমিল্লায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদার জামিন আবেদন দুটি হাই কোর্টের কার্যতালিকায় উঠছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, একই সঙ্গে করা তিনটি জামিন আবেদনের একটির শুনানি শেষ হয়েছে। বাকি দুটি আবেদনের শুনানি নিয়ে তবেই আদালত আদেশ দেবে।

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “শুনানি শেষ হওয়া আবেদনটিসহ বাকি দুটি আবেদনেও রোববার আদালত আদেশ দেবেন।”

এই তিনটির পর আরও দুটি মামলায়ও জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন খালেদা।

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হয়

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি শেষ করার পর আবার শুনানি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে এ জে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, মাসুদ রানা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ, এ কে এম দাউদুর রহমান মিনা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রানা।  

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে কালক্ষেপণের অভিযোগ তোলেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানির জন্য আজ কার্যতালিকার ৫ ও ৬ নম্বরে ছিল। সেই অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলাটি শুনানির জন্য আসলেও শুনানি শুরু করতে পারিনি। আমাদের দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়ার কারাবরণকে দীর্ঘায়িত করার জন্য অযথা সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।”

চৌদ্দগ্রামের এই মামলাটিতে খালেদাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।

“খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেই কারণেই কর্মীরা বাসে হামলা করেছে. সেখানে পেট্রোলবোমা মারা হয়েছে। লোক মারা হয়েছে- এজাহারে শুধু এটুকুই বলা হয়েছে খালেদা জিয়া সম্পর্কে।

“খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে ছিল না, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পরোয়ানা নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, আসামির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আসামি যদি মহিলা হয়, অসুস্থ হয় বা অল্প বয়স্ক হয় তাহলে তাকে জামিন দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে জামিন না দেওয়ার আইনগত বিধান নেই। তাই আশা করি আমরা জামিন পাব।”

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারিক আদালতে আবেদনের সুরাহা হওয়ার আগে এভাবে উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়ার বিরোধিতা করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যেখানে মামলার জামিনের আবেদন জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলাটি সেখানে বিচারাধীন রেখে হাই কোর্ট বিভাগ থেকে আদেশ দেওয়া সঠিক হবে না।”

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “নিম্ন আদালতে একটি জামিনের আবেদন পেন্ডিং থাকা অবস্থায় হাই কোর্টে মুভ করা যাবে কি না, এটা একটা আইনগত প্রশ্ন।

“আগামীকাল যদি একজন ফাঁসির আসামি, হত্যা মামলার আসামি বা একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী হাই কোর্টে চলে আসেন নিম্ন আদালতে জামিন না চেয়ে, কীভাবে ঠেকাবেন?

“নিম্ন আদালতে একটি মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় হাই কোর্টে একই বিষয়ে আদেশ দেওয়া ঠিক হবে কি না, এটাই হল বিবেচ্য বিষয়। তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) এটা বুঝতে সমর্থ হচ্ছেন না বোধহয়।”

কুমিল্লার দুটি মামলায় খালেদার আইনজীবীরা গত ২২ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য ৭ জুন তারিখ রাখেন। শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হলে ১৪ মে তা খারিজ করেন বিচারক। এর মধ্যে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়।

অবরোধের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় আট যাত্রী নিহত হন। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান পরদিন খালেদাকে হুকুমের আসামি করে মামলাটি করেন।

কুমিল্লার বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটিও নাশকতা নিয়ে।

অবরোধের মধ্যে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামে একটি কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিনই চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়।

২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তাতে খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।

নড়াইলের আদালতে খালেদার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি দায়ের করা হয় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করার অভিযোগে। নড়াইল জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকী ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ মামলা দায়ের করেন।