তিস্তার অগ্রগতি ‘যথাসময়ে’ জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জট খোলায় ‘অগ্রগতি’ আছে বললেও তা জানালেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 01:46 PM
Updated : 23 May 2018, 01:46 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এলে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সফরে তিস্তার আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অগ্রগতি হচ্ছে, যথাসময়ে জানতে পারবেন।”

অর্ধ যুগ আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ঝুলে যাওয়ার পর তিস্তার জট আর খোলেনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি এর কারণ।

নয়া দিল্লিতে পালাবদলে ক্ষমতায় আসা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আশা দিলেও এখনও মমতাকে রাজি করাতে পারেননি।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দ্বিপক্ষীয় যে কোনো বৈঠকেই ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লিকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও তার সাম্প্রতিক ভারত সফরে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তোলেন। তখন মোদী বলেন, মমতাকে রাজি করাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মে ভারত সফরে যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে তার এই সফর বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করবেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পরদিন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেনে শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ‘ডি লিট’ ডিগ্রি দেওয়া হবে বলে জানান মাহমুদ আলী।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

বাংলাদেশ এখন যে রোহিঙ্গা সঙ্কট সামলাচ্ছে, ভারতে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় আঞ্চলিক সমস্যার এই বিষয়টিও উঠবে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতে ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গারা যে যাবে, তারা থাকবে কোথায়? বাড়ি-ঘর সব তো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অভ্যর্থনা ক্যাম্পে বড় জোর দুই- একদিন থাকতে পারে। কাজেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্কুল তৈরি করতে হবে।”

বাংলাদেশমুখী এই রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে অবকাঠামো তৈরিতে ভারত সহযোগিতা করছে বলে তিনি জানান।

“ডিসেম্বর মাসের ভারতের তখনকার পররাষ্ট্র সচিব জয় শংকর মিয়ানমার যান এবং মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আড়াই  মাস আগে ভারত সরকার অবকাঠামো তৈরির মালামালগুলো মিয়ানমার পাঠিয়েছে।”

“আপনারা (সাংবাদিক) কোথা থেকে কী শোনেন! আবার জিজ্ঞাসা করছেন! ভারত কিছু করছে না- এগুলো তো ঠিক নয়,” বলেন মাহমুদ আলী।

নির্যাতনের মুখে এই দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নিতে রাজি হলেও পাঁচ মাসও প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি নেই। মিয়ানমারের গড়িমসির কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়ও এসেছে।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদী আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সফল হবেন তারা।

তিনি বলেন, “আমরা আরও কয়েকটি দেশকে বলেছি, যেমন চীনকে, তারাও সহযোগিতার কথা বলেছেন। ইন্দোনেশিয়াও বলেছে। জাপানও এগিয়ে এসেছে সহযোগিতার জন্য।

“রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সুন্দর ইংরেজিতে বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমরা যেমন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। এখনও আমরা আপনাদের পাশে আছি। কাজেই এর পরে আর কী থাকতে পারে?”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট কি না- জানতে চাইলে মাহমুদ আলী বলেন, “আমরা আশাবাদী। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা তো অতীতে ফেরত পাঠিয়েছি।”