কানাডায় আশ্রয়প্রার্থী যুবদলকর্মী মো. মোস্তফা কামালের জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেশটির ফেডারেল আদালত এক রায়ে বলেছে, তার আবেদন স্থগিত করা হয়েছিল; পরে দেখা যায়, সে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নয়, কেননা এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে, সে এমন একটি সংগঠনের সদস্য যে দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকারকে উৎখাতের চেষ্টায় জড়িত ছিল।
এর আগে মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গতবছর কানাডার আদালত নাকচ করেছিল একই যুক্তিতে।
সেই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারে- এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে।
মোস্তফা কামালের মামলার রায়ে কানাডার ফেডারেল আদালতের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন বলেছেন, কানাডার অভিবাসন বিভাগ বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত’ বিবেচনা করে ‘যৌক্তিক’ সিদ্ধান্তই দিয়েছে।
কানাডীয় আদালতের এ রায়ের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে জুয়েল হোসেন গাজীর রায়ের পর বিএনপি বলেছিল, কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগকে ‘ভুল তথ্য দিয়ে নাটক সাজানো’ হয়েছে। আর এর ভিত্তিতে আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলার বিষয়টি ‘সরকারের চক্রান্তের অংশ’।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, মোস্তফা কামাল ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় আশ্রয়প্রার্থী হন। আশ্রয়ের আবেদনে তিনি নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ওই বছর বিএনপির ডাকে টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে ব্যাপক সহিংসতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
সেই ঘটনাপ্রবাহে বিএনপির ভূমিকা বিবেচনা করে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ কামালের আবেদন আটকে দেয়। পরে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ হলে কামাল বিচারিক পর্যালোচনার আবেদন করেন।
কামাল আদালতে যুক্তি দেন, তিনি যুবদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন, বিএনপির কেউ নন। আর বিএনপি সন্ত্রাসবাদে যুক্ত ছিল- ইমিগ্রেশন বিভাগের এমন পর্যবেক্ষণও সঠিক নয়।
কানাডার ফেডারেল আদালতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয় এপ্রিলে। দেশটির পাবলিক সেফটি ও ইমার্জেন্সি প্রিপার্ডনেস দপ্তরের মন্ত্রীর পক্ষে তার আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, যুবদল বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ওই দলটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বলপূর্বক সরকার উৎখাতের চেষ্টায় জড়িত বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে।
আদালতের নির্দেশে মন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত হয় এবং কানাডার অভিবাসন বিভাগ তাদের প্রতিবেদনে পাবলিক সেফটি ও ইমার্জেন্সি প্রিপার্ডনেস দপ্তরের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানায়।
এরপর কানাডার ফেডারেল আদালত কামালের আবেদন খারিজ করে গত ৪ মে রায় দেয়।