বদির বিষয়ে তথ্য থাকলে দিন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মাদক পাচারে কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ থাকলে তা সাংবাদিকদের দিতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2018, 12:37 PM
Updated : 22 May 2018, 02:38 PM

মাদক পাচারে যুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না- বলার পর সাংবাদিকরা এমপি বদির বিষয়ে জানতে চাইলে এই আহ্বান জানান তিনি।

মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সারাদেশে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; তাদের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে  অনেকে মারাও পড়ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

এই অভিযানে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে দাবি তোলার পাশাপাশি দলীয় বিবেচনায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য বদির দিকে ইঙ্গিত করে সোমবার বলেন, “সবার আগে নিজের ঘরের মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আপনাদের কক্সবাজারের টেকনাফের এমপি, তাকে তো জামিন দিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মহানন্দে এই ব্যবসা শুরু করেছেন।”

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকরা চলমান অভিযান নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমরা তথ্যভিত্তিক, প্রমাণভিত্তিক কাজ করছি। পরিষ্কার কথা, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার।

“আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা, এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স; সে সংসদ সদস্য হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা হোক, যেই হোক, ইভেন সাংবাদিক হোক, কাউকে আমরা ছাড় দেব না।”

আবদুর রহমান বদি (ফাইল ছবি)

কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

“আপনারা দেখেছেন, আমাদের একজন মাননীয় সংসদ সদস্য (টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানা) আজকে কয় বছর ধরে জেলে আছে। সে জামিনও পায়নি।

কাজেই আইন সবার জন্য সমান। আইনের বাইরে আমরা কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিই না।

“আপনারা যার নামটি উচ্চারণ করেছেন সে একবার জেলে গিয়েছিল। তার সম্বন্ধে আমরা যতটুকু জানবার চেষ্টা করছি, জানছি। আপনারাও (সাংবাদিক) তথ্য আমাদের দেন।”

কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ-উখিয়া) সংসদ সদস্য বদির মাদক মাদক পাচারে মদদদানের অভিযোগ খোদ সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল। তবে বদি বরাবরই মাদক পাচারে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

২০১৪-১৫ সালের ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বদির নাম থাকার কথা জানানো হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না; সে বদি হোক আর যেই হোক। সঠিক প্রমাণ আমরা যার বিরুদ্ধে পাচ্ছি, তাকেই গ্রেপ্তার করছি।

“আপনাদের নিশ্চিত করছি যে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। সে সংসদ সদস্য হোক আর যেই হোক। তথ্য যেগুলো আসছে, তার সঙ্গে প্রমাণ যদি না জোগাড় করি, কাউকে নক করছি না। এটাও আপনাদের বলছি।”

তাহলে কি বদির মাদক সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই- এই প্রশ্নে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “আপনাদের কাছে কিছু থাকলে আমাদের দেবেন। শুধু বদি নয়। যে কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল (ফাইল ছবি)

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা তালিকায়ও বদির নাম থাকার কথা গণমাধ্যমে এসেছিল।

সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, “অনেকের নাম আছে। অনেকে ইমোশনালি নাম দেয় যে এটা হতে পারে। এটা হতে পারে, বা হতে পারে না, তা তো তদন্তের বিষয়। তদন্তে প্রমাণ তো পেতে হবে।”

বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকসেবীদের অর্ধেকের বেশি ইয়াবায় আসক্ত। এই ইয়াবা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়েই আসে এবং  এই চোরাকারবার বদির নিয়ন্ত্রণে হয় বলে অভিযোগ।

ইয়াবার বিস্তারের জন্য মিয়ানমারের অসহযোগিতাকে দায়ী করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ইয়াবা নামে মাদকটি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। মিয়ানমারও বলে যাচ্ছে, কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল সহযোগিতা যেটা, সেটা তারা করছিল না। সেজন্য ইয়াবার বিস্তৃতি এভাবে ঘটেছে।”

চলমান মাদক দমন অভিযানে বন্দুকের ব্যবহার নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা সন্দেহ করলেও ঘটনাগুলো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলেই দাবি করেছেন আসাদুজ্জামান কামাল।

তিনি বলেছেন, “আপনারা (সাংবাদিক) জানেন, মাদক যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রভাবশালী, শক্তিশালী এবং তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে অবৈধ অস্ত্র সবই আছে।

“আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখনই হাই-প্রোফাইল মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গেছেন, তারা হয় পালিয়েছেন, বা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন।

“এই যুদ্ধে যখন লিপ্ত হয়েছে....পুলিশের উপর অ্যাটাক করলে কাউন্টার অ্যাটাক করার আইন আমাদের দেশে আত্মরক্ষার্থে রয়েছে। সেই ঘটনাটি ঘটে। কয়েকদিনে কয়েকটি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।”