রাজীবের ভাইদের কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ স্থগিত

কলেজছাত্র রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে দুই পরিবহন সংস্থাকে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2018, 05:38 AM
Updated : 3 April 2019, 10:03 AM

তার বদলে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টকে একটি স্বাধীন কমিটি করে দিতে বলেছে। দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তা চিহ্নিত করে ওই কমিটি ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

স্বাধীন কমিটি যে প্রতিবেদন দেবে, তা মূল্যায়ন করে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ‘পর্যাপ্ত’ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিতে হাই কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

বিআরটিসির পক্ষে এ বি এম বায়েজিদ ও মুনীরুজ্জামান এবং স্বজন পরিবহনের পক্ষে আবদুল মতিন খসরু ও পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিপূরণের জন্য রিট আবেদনকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজলও উপস্থিত ছিলেন আদালতে।

রুহুল কুদ্দুস কাজল পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করতে, যে কমিটি দুর্ঘটনার দায় এবং দায়ী কে- তা নিরূপণ করবে। কমিটিকে ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। ”

বিআরটিসির আইনজীবী মুনীরুজ্জামান বলেন, “দায়ী হলে বিআরটিসি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত। আমরাও এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পক্ষে। কিন্তু দুর্ঘটনার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ না করে তো এটা হতে পারে না। আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশটি স্থগিত করে যে আদেশ দিয়েছে, নিঃসন্দেহে তা বাস্তবসম্মত এবং যথাযথ।”

গত ৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে বিআরটিসির যাত্রী রাজীবের ডান কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার মাথার সামনে-পেছনের হাড় ভেঙে যাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের সামনের দিকে আঘাত লাগে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল রাতে সরকারি তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনা এবং রাজীবের মৃত্যু পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

দুই বাসের চাপায় ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ৪ এপ্রিল হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ রাজীবের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেয় আদালত।

ওই রুল শুনানির আগেই রাজীবের মৃত্যু হলে রুহুল কুদ্দুস কাজল ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আদালতে একটি সম্পূরক আবেদন করেন। এরপর হাই কোর্ট গত ৮ মে রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়।

ওই এক কোটি টাকার অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য দুই পরিবহনের মালিককে এক মাসের সময় বেঁধে দেয় হাই কোর্ট।

এরপর বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করলে সোমবার তার ওপর শুনানি করে মঙ্গলবার আদেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।

পটুয়াখালীর বাউফলের ছেলে রাজীব যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, তখনই মারা যান তার মা। বাবাও চলে যান রাজীব অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে খালার বাসায় থেকে, কঠোর পরিশ্রমে স্নাতক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওই তরুণ।

তিতুমীর কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে আর আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় নিজের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে কিশোর বয়সী দুই ভাই পড়েছে গভীর অনিশ্চয়তায়।

দুই ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী হোসেন যাত্রাবাড়ীর তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সপ্তম এবং ছোট ভাই আবদুল্লাহ একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।