মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে নিহত আরও ১১ জন

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আরও ১১ জন নিহত হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ এসব ঘটনাকে বর্ণনা করে আসছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2018, 03:15 AM
Updated : 22 May 2018, 12:56 PM

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে নয় জেলায় মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়।

এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে কুমিল্লা ও নীলফামারীতে দুইজন করে মোট চারজন এবং চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোণা ও দিনাজপুরে একজন করে তিনজন নিহত হয়েছেন। আর র‌্যাবের গুলিতে চট্টগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন চারজন।

পুলিশ ও র‌্যাবের দাবি, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত চার দিনেই অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  যেভাবে তা দমন করছে- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এ ধরনের ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

এসব ঘটনার যে বিবরণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আসছে, তা মোটামুটি একই রকম। তাদের দাবি, অভিযানের সময় মাদক চক্রের সদস্যরা গুলি চালালে পাল্টা গুলিবর্ষণ হয়, তাতেই এদের মৃত্যু ঘটে।

তবে বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে, ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় তাদের স্বজনদের।

দেশ থেকে মাদক নির্মূলের প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেন, জঙ্গি দমনের মত মাদক ব্যবসায়ী দমনে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। আর এই দায়িত্ব মূলত দেওয়া হয়েছে র‌্যাবকে।

অবশ্য গোয়েন্দা পুলিশ, রেল পুলিশ, থানা পুলিশ এবং বিজিবিকেও নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানে দেখা যাচ্ছে।

সোমবার রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুমিল্লা

কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়েছেন, যারা জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ মাদক চোরাকারবারি’ বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলছেন, গোয়েন্দা শাখা ও থানা পুলিশের কয়েকটি দল সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে বিবির বাজার অরণ্যপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত দুজনের মধ্যে মো. শরীফ (২৬) জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেষপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। আর নিহত পিয়ার আলী (২৮) আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে।

শরীফের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের পাঁচটি এবং পিয়ারের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানান কোতোয়ালির ওসি।  

অভিযানে অংশ নেওয়া কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের একটি বড় চালান আসছে খবর পেয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমনের নেতৃত্বে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি দল অরণ্যপুর এলাকায় অবস্থান নেয়।

“রাত পৌনে ১টার দিকে মাদক চোরাকারবারিরা সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি করে। গোলাগুলি থামলে শরীফ ও পিয়ারকে সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।”

তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এসআই শাহ কামাল।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজেরো গাড়ি, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

এই অভিযানে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রূপ কুমার, এসআই শাহ আলম, কনস্টেবল তানভীর এবং ডিবির এএসআই শাহীনুর আলম আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে ওসি ছালাম মিয়া জানিয়েছেন।

এদিকে কুমিল্লা দেবিদ্বার বাগুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাদ্দাম নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

২৪ বছর বয়সী সাদ্দাম দেবিদ্বার উপজেলার আবদুল আজিজের ছেলে। বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলে দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান।

নীলফামারী

নীলফামারীর সৈয়দপুরে সোমবার সন্ধ্যায় মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার দুই যুবক মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল বলছেন, মঙ্গলবার ভোরে সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় ‘মাদক চোরাকারবারীদের সঙ্গে’ পুলিশের গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন সৈয়দপুর পৌর শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আব্দুল হান্নানের ছেলে মো. জনি হোসেন (২৭) এবং নিচু কলোনি মহল্লার ইউসুফ হোসেনে ছেলে শাহিন আহমেদ (৩০)।

পুলিশ কর্মকর্তা অশোক বলেন, “নিহতরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। দুজনের বিরুদ্ধেই সৈয়দপুর থানায় আটটি করে মামলা রয়েছে।”

তিনি জানান, সোমবার বিকালের দিকে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে পুলিশ। সন্ধ্যার দিকে ইসলামবাগ মহল্লা থেকে জনি এবং নিচু কলোনী মহল্লা থেকে শাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গোলাহাট এলাকার  মাদক ব্যবসায়ী জসিয়ার রহমান ও নূর বাবুর কাছ থেকে তারা ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদসহ বিভিন্ন মাদক কিনে এলাকায় বিক্রি করে। জসিয়ার ও নূরবাবু সৈয়দপুর গোলাহাট বধ্যভূমির বিভিন্ন স্থানে মাদক লুকিয়ে রাখে।”

জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই দুই যুবককে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ রাত ৩টার দিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। ভোরের দিকে তারা গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় গেলে সেখানেই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে অশোক কুমার পালের ভাষ্য।

তিনি বলেন, “সেখানে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের দিকে গুলি করে এবং ককটেল ছোড়ে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। ওই সময় জনি ও শাহিন পালানোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা তখন পালিয়ে যায়।”

এ অভিযানে চোরা কারবারিদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াদুদ রহমান ও কনস্টেবল মোকাররম হোসেন আহত হয়েছেন এবং তাদের সৈয়দপুর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে চারটি ককটেল, চারটি দেশীয় অস্ত্র একটি মোটরসাইকেল এবং একশ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছ।

পালিয়ে যাওয়া মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অশোক কুমার পাল।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন রোডে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামরুজ্জামান সাধু নামে ৫০ বছর বয়সী একজন নিহত হয়েছেন।  

আলমডাঙ্গা থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম বলছেন, উপজেলার হারদী গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে কামরুজ্জামান সাধুর বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে ‘একাধিক’ মামলা রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শফিকুল বলেন, সাধু ও তার সহযোগীরা এক বস্তা ফেনসিডিল নিয়ে স্টেশন এলাকা দিয়ে যাচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার রাত আড়াইটার দিকে রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশের পুকুরের কাছে অবস্থান নেয়।

“পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে কামরুজ্জামান সাধু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।”

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি এবং প্লাস্টিকের একটি বস্তা ভর্তি ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে বলে জানান শফিকুল।

তিনি জানান, নিহত সাধুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণায় পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার এক যুবক কয়েক ঘণ্টার মাথায় সদর উপজেলার বড়াইল বালুঘাটে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

নিহত আমজাদের (৩৫) বাড়ি নেত্রকোণা শহরের উত্তর নাগড়া এলাকায়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ১৩টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

নেত্রকোণা সদর মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে সোমবার রাতে নাগড়া এলাকা থেকে আমজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য তাকে নিয়ে মধ্যরাতে বড়াইল বালুঘাটে যায় পুলিশের একটি দল।

“সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা আমজাদের সঙ্গীরা পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। এই গোলাগুলির মধ্যে পড়ে আমজাদ নিহত হয়।”

পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫০০ গ্রাম হেরোইন ও ৩০৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি।

তিনি বলছেন, এই অভিযানে তিনি নিজে এবং এসআই মামুন, মহসিন,মকবুল ও কনস্টেবল মালেক আহত হয়ে নেত্রকোণা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে চার দিনের ব্যবধানে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরও একজন সন্দেহভাজন মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভোর রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ঢেবার পাড়ে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে র‌্যাব-৭ চাঁদগাও ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশিকুর রহমানের ভাষ্য।

তিনি বলেন, নিহত শুক্কুর আলীর (৪৫) বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র‌্যাবের একটি টহল দল ভোরের দিকে ঢেবার পাড় এলাকায় অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা র‍্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছোড়ে। তখন আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।”

তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয়রা নিহত ওই ব্যক্তিকে শুক্কুর আলী হিসেবে শনাক্ত করে বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ গাঁজা এবং একটি ওয়ানশুটার গান উদ্ধার করেছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশিকুর।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম শহরের মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত বরিশাল কলোনীতে র‌্যাবের অভিযানে দুইজন নিহত হয়।

ফেনী

ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে র‌্যাবের চেকপোস্টে তল্লাশির সময় মঙ্গলবার ভোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে। 

নিহত মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় মাদক চোরাচালান ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা রয়েছে বলে র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিমের ভাষ্য।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মাদকের একটি চালান ঢাকার দিকে যাওয়ার খবরে ফেনীর লেমুয়ায় মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল র‌্যাব।

“ভোরের দিকে মাদক ব্যবসায়ীরা সেখানে পৌঁছে র‌্যাব দেখে গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এসময় মাদক ব্যবসায়ী মঞ্জু গুলিবিদ্ধ হয়।”

মঞ্জুকে পরে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা ফাহিম। 

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে।

রাব ৭ এর সহকারী পরিচালকিএএসপি মিমতানুর রহমান বলেন, “মঞ্জু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার গডফাদার। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হলেও পরে সে জামিনে বেরিয়ে যায়।”

দিনাজপুর

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন।

নিহত প্রবাল হোসেন (৩৫) বিরামপুরের দক্ষিণ দামোদারপুর (বাসুদেবপুর) গ্রামের খলিল উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় আটটি মামলা রয়েছে বলে বিরামপুর থানার ওসি আব্দুস সবুরের ভাষ্য।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিরামপুর পৌর এলাকার মনিপুর বলোকায় সোমবার রাতে মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ।

“রাত ৩টার দিকে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি করলে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রবালকে পায়।”

ভোরের দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি রিভলবার, পাঁচটি ককটেল এবং ৯৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে, যাকে একজন মাদক চোরাকারবারি বলছে র‌্যাব।

র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক বলছেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার শিমুলতলী এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত বাচ্চু খান (৩৩) রাজধানী ঢাকার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে। তিনি টঙ্গী, গাজীপুর ও কালিয়াকৈর এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

মেজর ইশতিয়াক বলেন, মাদকের একটি বড় চালান যাবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি দল ভোরের দিকে শিমুলতলী এলাকায় অভিযানে যায়।

“র‌্যাব সদস্যরা একটি নিশান গাড়িকে থামার সংকেত দিলে তিনজন মাদক ব্যবসায়ী গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। র‌্যাবও তখন পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলি থামার পর ঘটনাস্থলে বাচ্চু খানের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার সঙ্গীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।”

আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা এবং দুটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

মেজর ইশতিয়াক বলছেন, এ অভিযানে আক্কাস (৩৫) নামে এক র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মাদক মামলার এক আসামি নিহত হয়েছে, আটক করা হয়েছে তার স্ত্রীকে।  

মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে বলে র‌্যাব-১০ এ দায়িত্বরত অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী জানান।

নিহত ধন মিয়া (৩৫) বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় চারটি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জারার র‌্যাব কর্মকর্তা ফারুকী।

তিনি বলেন, মাদকের একটি চালান যাওয়ার খবরে র‌্যাব -১০ এর একটি দল ভোর রাতে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়।

“ধন মিয়া ও তার স্ত্রী মাদকের চালান নিয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি শুরু করে। তখন র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ধন মিয়া নিহত হয়।”

পরে র‌্যাব সদস্যরা ধন মিয়ার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করে এবং ১১ হাজার ৭০০ ইয়াবা, ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা, একটি পিস্তল উদ্ধার করে। ওই দম্পতির ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি র‌্যাব জব্দ করেছে বলেও মহিউদ্দিন ফারুকী জানান।