মাদক নির্মূলে বন্দুকের ব্যবহারে উদ্বেগ সুলতানা কামালের

মাদক দমন অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাগুলো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এতে হতাহতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2018, 10:51 AM
Updated : 21 May 2018, 11:14 AM

“কেন এই উপায়েই মাদক সন্ত্রাস দমন করতে হচ্ছে, অন্য কোনো উপায় কি নেই?” প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক অনুষ্ঠানে এসে নিজের উদ্বেগের কথা জানান সুলতানা কামাল।

মাদক দমনে অভিযান চালাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় গত দুই দিনে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, অভিযানের সময় মাদক চক্রের সদস্যরা গুলি চালালে পাল্টা গুলিবর্ষণ হয়, তাতেই এদের মৃত্যু ঘটে। তবে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের দাবি, ধরে নিয়ে হত্যা করা হয় তাদের স্বজনদের।

সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা তো একটা ‍যুদ্ধের মধ্যে নেই। আমরা তো একটা স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে বাস করছি। সেই জায়গায় এরকমভাবে দিনে ৫/৬ জন করে যদি বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়, সেখানে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা।”

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “এই জন্যই এ সমস্ত ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আমাদেরকে অবহিত করতে হবে। প্রত্যেকটা ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিৎ।

“আসলেই এখানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে কি না? কিংবা অন্য কোনোভাবে বন্দুকের অপব্যবহার হচ্ছে কি না? সেটাও আমাদের জানা দরকার। কারণ এই অস্ত্রটা আমরাই তুলে দিয়েছি তাদের হাতে।”

অপরাধী যেই হোক না কেন, তার আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের কতগুলো নিয়ম-নীতি রয়েছে, সে অনুযায়ী তাদের বিচার হতে হবে। এর মাধ্যমে কেউ দোষী প্রমাণিত হয় সেই জন্য যে শাস্তি প্রাপ্য সেটা তাকে দিতে হবে।

মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চট্টগ্রামে গত বৃহস্পতিবার নিহত হন এই ব্যক্তি

‘বন্দুকযুদ্ধের’ সমালোচনা করলেও মাদকের মতো একটা ‘বিষাক্ত ব্যাপার’ দমনে কঠোর আইন করে তা প্রয়োগের আহ্বান জানান সুলতানা কামাল।

“আমরাও চাই কঠোর আইন হোক, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা যে, আমাদের সংবিধান বলে তো একটা কথা আছে।”

জাতিসংঘের ইউপিআরের আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ বিষয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিএসএ, এনএনএমসি, এএলআরডি ও কাপেং ফাউন্ডেশন। সুলতানা কামাল সিএনএ’র চেয়ারপার্সন।

অনুষ্ঠানে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, “পত্রিকা খুলতেই দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে যে, মাদকের বিরুদ্ধে একটা অভিযান চলছে। এই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে আমাদের কারোই দ্বিমত নেই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে কাজটি হচ্ছে সেটি সঠিক হচ্ছে কি না, ভেবে দেখা দরকার।

“কারণ যে অপরাধী হোক, মাদক ব্যবসায়ী হোক বা মাদক চোরাচালানি হোক অথবা মাদকের সঙ্গে অন্য কোনোভাবে সম্পৃক্ত হোক, সকলেরই মৌলিক অধিকারগুলো আমাদের সংবিধানে আছে। সংবিধানের সেই পন্থা অনুসরণ না করে এটা করার ফলে সুদূরপ্রসারী যে ফলাফল হবে, সেটা আমাদের রাষ্ট্রের জন্য সুষ্ঠু ফল আনবে না।”

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিএসএর সদস্য আকলিমা ফেরদৌস। এতে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, এনএনসির কো-অর্ডিনেটর মুজাহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।