খুলনার নির্বাচন সুষ্ঠু, উন্নয়ন উপলব্ধিতে নৌকায় ভোট: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে এবং উন্নয়ন উপলব্ধি করতে পেরে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 03:10 PM
Updated : 20 May 2018, 03:10 PM

খুলনার নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা রোববার বিকালে গণভবনে দলীয় সভানেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “একটা সময় ছিল যখন খুলনার মানুষ ভোট দিতই না। এবার ঠিকই আমরা জিতলাম। এই ভোটটা এসেছে, আমরা যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি, তাতে মানুষের উপলব্ধি হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে আসলে ভোট দিতে হয়।”

গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক। নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী।

আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচনে বাইরে সব কিছু সুন্দর-শান্ত, কিন্তু ভেতরে সব ‘গোলমেলে হয়ে গেছে’।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও এই নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হতাশা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, নির্বাচনে কিছুটা অনিয়ম হলেও তা ভোটের ফলাফল পাল্টানোর মতো নয়।   

তবে প্রধানমন্ত্রী বলছেন,  “এত সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে খুব কমই হয়েছে।”

তিনি বলেন, “খুলনাবাসী দেখেছে আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়নের কাজ হয়, বিএনপি এলে হয় না। সেজন্য তারা ভোট দিয়েছে। দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, ঠিকই নয় বছরে দিন বদলে দিয়েছি। এ কারণেই মানুষ ভোট দিয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন নিয়ে অনেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তাদের জবাবে বলতে চাই, নির্বাচন নিয়ে যে খেলা, সিল মারা, বাক্স ভরা থেকে শুরু করে যত অনিয়ম এটাতো শুরু করে দিয়েছে জিয়াউর রহমান।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, খালেদা জিয়ার অধীনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এবং বিভিন্ন উপনির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভোট  চুরি করাটাই তাদের চরিত্র। যারা ভোট নিয়ে চূলচেরা বিশ্লেষণ করে তারা ভুলে যায় কেন সেই সব নির্বাচনের কথা?”

অনিয়মের অভিযোগে খুলনা সিটির ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুই তিনটা কেন্দ্রে সমস্যা হয়েছে সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে করেছে সেভাবেই হয়েছে। আমাদেরতো হাত-পা বাঁধা। আমাদের একটা এমপি কাজ করতে পারছে না, আমাদের একটা মন্ত্রী কাজ করতে পারছে না। আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম আছে কি না?”

ইংল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই করে। আমাদের নির্বাচন কমিশনের যেটা নিয়ম, আমাদের সবার হাত-পা বাঁধা।”

তবে আওমামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ‘বাধা, নির্বাচন’ উত্তরণ অসম্ভব না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে কোনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়া কঠিন না। যদি আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করে।”

জনগণের ভোটও ‘ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও আওয়ামী লীগের অবস্থান ‘অনেক অনেক উপরে’।

“মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আওয়ামী লীগ পেয়েছে, যার প্রতিফলন খুলনার নির্বাচনে দেখা গেছে।” 

তালুকদার আব্দুল খালেককে বিজয়ী করায় খুলনাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে খুলনার উন্নয়ন আরও তরান্বিত হবে।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বিএনপির মতো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে গড়ে ওঠা দল না। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। এই দল ক্ষমতায় থাকলে মানুষের উন্নতি হয়।”

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “এমনকি বিএনপির মেয়র থাকাকালেও আওয়ামী লীগের সময় প্রত্যেকটা সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন হয়েছে। আমরা কিন্তু উন্নয়নের প্রকল্প বন্ধ করিনি। কিন্তু বিএনপির সময় ক্ষমতাসীন দলের মেয়ররাও উন্নয়নের কাজ করেনি।

“ওরা ক্ষমতায় থাকা মানে একটা না একটা অঘটন ঘটবেই। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই বাংলাদেশের জন্য দুর্যোগ নেমে আসা। মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করা, তারা অত্যাচার জানে, উন্নয়ন জানে না।”

এক সময় খুলনার শিল্প সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সেখানকার বন্দর ও কারখানা বন্ধের জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করেন শেখ হাসিনা।

তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খুলনায় বন্ধ কারখানা চালু, বন্দর সচল করা, বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।