রোজায় গ্যাস সংকট ‘আরও বেড়েছে’

রোজায় ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট আরও তীব্র হয়েছে, সারা দিনেও চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে অনেক পরিবার।

জাফর আহমেদও ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2018, 04:57 PM
Updated : 6 Nov 2018, 05:39 AM

অনেক জায়গায় ভোরের দিকে গ্যাস থাকলেও সকাল ৮টার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আর গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, রোজার মধ্যে গ্যাসের অভাবে বাসায় ইফতারি তৈরি করতে না পারায় ভোগান্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

সংকট উত্তরণের বিষয়ে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের কর্মকর্তারাও আশার বাণী শোনাতে পারেননি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন) এম এইচ আশরাফ আলী বলছেন, ঢাকার অনেক জায়গায় আগে থেকেই গ্যাসের সমস্যা। চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস পান তারা। এলএনজি সরবরাহ শুরু না হলে এই সংকটের সুরাহা হবে না।

রাজধানীর মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বর, শ্যামলী, সেগুনবাগিচা, পুরান ঢাকার টিকাটুলি, গোপীবাগ, গোলাপবাগ ও ধলপুরে গ্যাস সংকট খুব বেশি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

মিরপুর ১৩ নম্বরের সি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের বাসিন্দা রাবেয়া ইয়াসমিন কবিতা শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের এলাকায় গ্যাসের সমস্যা অনেক দিনের। এমনি সময়ে সকাল ৭টায় গ্যাস চলে যায়, আসে দুপুর ২টার পর।

“কিন্তু শুক্রবার প্রথম রোজায় ইফতারের সময়ও গ্যাস ছিল না, গ্যাস এসেছে ইফতারের পর।”

মাহমুদা খানম নামের মিরপুর ১৪ নম্বরের এক গৃহিনী বলেন, গত দুই বছর ধরে তাদের গ্যাসের সমস্যা। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এরপর গ্যাস এলেও রাত ৮টার পর আবার চলে যাচ্ছে। গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে রাত ১১টার পরে।

“এখন আমাদের ডিউটি হয়ে গেছে কখন গ্যাস আসছে তা দেখার। যখন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তখন তাড়াহুড়া করে রান্না বসিয়ে দেওয়া। কিন্তু খাওয়ার সময় খাবার গরম করে খাব, সে উপায় নেই। অনেক সময় ঠাণ্ডা-বাসী খাবার খেতে হয় বলে পেট খারাপ হয়।”

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা তানজিনা রহমান লিজা বলেন, তাদের বাসায় সকাল ১০টার পর থেকে গ্যাস থাকে না, আসে দুপুর ২টার পরে।

“কিন্তু প্রথম রোজার আগের রাতে ১০টার পর গ্যাস চলে গেল, যেটা অন্য সময়ে হয় না।”

রাজধানীর তেঁজগাও নাখালপড়ার বাসিন্দা মাইমুনা বেগম বলেন, বিকালে তাদের বাসায় গ্যাস থাকছে না। গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে রাতে।

“গ্যাসের অভাবে ইফতার তৈরি করতে পারছি না।”

গোলাপবাগে ইফতারের পরে গ্যাস আসে বলে জানালেন জাকারিয়া হোসেন নামের সেখানকার এক বাসিন্দা।

গ্যাস সংকটের সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে  কি না জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজার আগেই এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) জাতীয় পাইপ লাইনে যুক্ত হবে বলে আশা করেছিলেন তারা।

“কিন্তু তাও বিলম্বিত হয়ে গেছে।” 

গ্যাস সংকেটের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমরা নিয়মিতভাবে প্রায় ৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলা করছি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতির কারণে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন এলাকার পকেটে গ্যাস সঙ্কট বিরাজ করছে।

“আবার রোজা শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও অ্যাকটিভ হয়েছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের সম্যার মধ্যে পড়েছি।”

সরবরাহ সঙ্কট ছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় লাইনেও সমস্যা রয়েছে জানিয়ে আশরাফ আলী বলেন, “যখন গ্যাসের সামান্য সঙ্কট দেখা দেয় এসব এলাকার সঙ্কট তুলনামূলক তীব্র আকার ধারণ করে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে তখন খুব একটা চোখে পড়বে না।”

দ্রুত এলএনজি সরবরাহ শুর করা না গেলে এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।