হলে ‘হামলার পর’ থানায় গিয়ে হতাশ কোটা আন্দোলনের দুই নেতা

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র দুই যুগ্ম আহ্বায়কের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2018, 02:50 PM
Updated : 16 May 2018, 03:37 PM

নুরুল হক নূর ও মুহম্মদ রাশেদ খাঁন বলছেন, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে তাদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন।

এই অভিযোগ নিয়ে শাহবাগ থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। তবে পুলিশ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে তারা।

হলে হামলা ও থানায় জিডি না নেওয়া প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।

পরে বিকাল ৫টায় সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা এবং হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নূর বলেন, “গত রাত ১টা ৫০ ও ২টা ১৫ মিনিটে দুইবার আমি ও আমার সহযোদ্ধা রাশেদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পী, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী এবং চারুকলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইম ইসলাম লিমনসহ সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন দুইবার আক্রমণ চালায়। এ সময় পার্শ্ববর্তী রুম থেকে কয়েকজন এসে আমাদের রক্ষা করে, ফলে তারা ফিরে যায়।”

তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার হলেরই দুই জুনিয়র ইংরেজির ছাত্র নূর এবং চারুকলার ছাত্র লিমনের দ্বন্দ্ব মেটাতে নূরের সাথে কথা বলতে তার রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু নূর সেটাকে ইস্যু বানাচ্ছে।”

একই ব্যাচের ছাত্র নূর ও লিমন প্রথম বর্ষে থাকাকালে তৎকালীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাকসুদ রানা মিঠুর অনুসারী ছিলেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বাপ্পী বলেন, “লিমন আমাকে বলেছে, নূর নাকি লিমনের নামে ফেইক ফেইসবুক আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নূর আমার পাশের রুমেই থাকে, তখন আমি ওকে ফোন দিয়ে ওর রুমে যাই। ওখানে সানী আর লিমনও ছিল। আমি আজকে হল ছেড়ে দিচ্ছি। বড় ভাই হিসেবেই ওদের ঝামেলা মেটাতে গিয়েছি।

“নূর কথার মধ্যেই বারবার উত্তেজিত হয়। তখন আমি বলি, আন্দোলন করবি কর তবে নেত্রী বলার পরেও তোরা যেভাবে আন্দোলন করতেছিস এটাতো শিবির স্টাইল। নূর তখন আমাকে শিবির আর অনুপ্রবেশকারী বলে। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, আমি এতবছর ছাত্রলীগ করি। হল ছাড়ার আগের দিন কেউ যদি আমাকে শিবির আর অনুপ্রবেশকারী বলে তাহলে কেমন কষ্ট লাগে ভাই?”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নূররা আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি রাতেই সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে ওদের সাথে কথা বলেছি। সানীর সাথে সকালে কথা হয়েছে। ও আন্দোলনকারীদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে জানালেও হুমকির বিষয়টি বলেনি। আমরা বিষয়টি দেখব।”

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নূর বলেন, “আমরা তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।”

জিডি করতে গেলে শাহবাগ পুলিশ তা গ্রহণ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “শাহবাগ থানায় আমরা নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছি, থানা কর্মকর্তা আমাদের আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জিডি লিখিয়েছে, আমাদের অভিযোগ শুনেছে কিন্তু জিডি আমলে নেয়নি।

“তারা বলেছে, কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করে আমরা জিডি নিতে পারব না। কারণ আপনারা একটি আন্দোলন করতেছেন, এটা সাধারণ মানুষের কাতারে পড়ে না- সেজন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।”

পুলিশের এই আচরণকে ‘দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও লজ্জাজনক’ মন্তব্য করে নূর বলেন, “আমি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে মৌলিক দাবি জীবননাশের আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তা চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে যে আবেদন করেছি সেগুলো না দিয়ে পুলিশ সম্পূর্ণ দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য লজ্জাজনক।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন একটি জাতীয় বিষয়।

“ওরা একটা অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। আমরা বলেছি, আপনারা ব্যক্তিগতভাবে আসেন। তাছাড়া সে সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেনি।

“তাই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। জিডি নেব না-একথা বলিনি।” 

শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দেন নুরুল হক নূর।

তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলন করে আসছি, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি দাওয়াকে মেনে নেয়া হয়েছে এবং আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে আন্দোলনের কারণে কাউকে কোনো প্রকার হয়রানি করা হবে না।  কিন্তু আন্দোলন করার কারণে সারা দেশেই হয়রানি করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় চট্রগ্রাম, রংপুর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লাসহ অনেক জায়গায় আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করা হয়েছে এবং তাদের ওপর হামলাও করা হয়েছে।

“আমরা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকার ও পুলিশকে আহ্বান জানাই, আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দিন, কোনো শিক্ষার্থী যেন কোন রকমের হয়রানির শিকার না হয়। যদি আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশের কোথাও কোন শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হয় তবে বাংলার ছাত্রসমাজ তার পাশে দাঁড়াবে, আন্দোলন করবে আবার।”

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, “আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত তারা সরকারের কাছে নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মাঝে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই ছাত্রসমাজের মাঝে যে ভীতি কাজ করছে তা দূর করবেন।

“পাশাপাশি যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্টদের হয়রানি করছে এবং হুমকি দিচ্ছে, আমি মনে করি সরকার তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবেন, আর আমাদের নিরাপত্তা দেবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান উপস্থিত ছিলেন।